বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আঙুল ভেঙে পা ছোট রাখে চীনা নারীরা যে কারণে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:২২ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

চেহারায় নয়, নারীর সৌন্দর্য পায়ে—এমনটাই মনে করতেন সেকালের চীনারা। তাইতো হাজার বছর ধরে দেশটিতে অদ্ভুত এক রীতি চলছে। বয়স চারের কোটা পেরোনোর আগেই মেয়েদের পায়ের পাতা জোর করে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এক মাস কিংবা ১ বছর নয়, পুরো ১০ বছর এভাবে বাঁধা থাকতো। যাতে বড় হলে পায়ের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৪ ইঞ্চির বেশি না হয়।

ইতিহাস বলছে, প্রাচীন চীনে মেয়েদের সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে স্তনের থেকে বেশি গুরুত্ব পেত ছোট পা। আর অন্তর্বাসের মতোই আকর্ষণীয় ছিল এই পায়ের জন্য তৈরি করা ‘লোটাস শ্যু’-এর। কেন এবং কীভাবে এই যন্ত্রণাদায়ক আমানবিক প্রথা চালু হয়, সে গল্প অনেকেরই অজানা। তাই তা নিয়ে আছে বহু মত। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মতের কথা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে।

চীনের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক কু মো রো তার এক বইতে উল্লেখ করেন, ৯৬০-১২৭৯ সালে সং বংশের রাজত্বকালে রাজ দরবারের নর্তকীদের মধ্যে প্রথম এই প্রথা চালু হয়। সে সময়ে সং রাজবংশের রাজকুমার লি ইউ এক যৌন কর্মীর প্রেমে পড়েন। তার নাম ইয়াও নিয়াং। বলা হয়, ছোট পা হওয়ার জন্য নাচের সময় তাকে দেখতে দুর্দান্ত লাগতো। সেই থেকে সবাই নিজের পা ছোট করতে উঠে পড়ে লাগলো।

অন্তর্বাসের মতোই আকর্ষণীয় ছিল এই জুতাগুলো

অন্তর্বাসের মতোই আকর্ষণীয় ছিল এই জুতাগুলো

তবে তা নিয়ে দ্বিমতেরও শেষ নেই। অনেকের মতে, প্রাচীন চীনা রাজবংশের কোনো এক রানির পা জন্মগত ভাবে ছোট ছিল। নিজেকে যাতে দেখতে বাজে না লাগে তাই তিনি স্বামীকে বললেন- দেশের সব মহিলার পা ছোট করতে হবে। তাই মেয়েদের পা বেঁধে রাখা হোক। এবং সারা দেশে এই প্রথা বাধ্যতামূলক করা হোক।

পায়ের পাতা ছোট করতো যেভাবে

বেশ কষ্টসাধ্য ও নির্মম একটি কাজ এটি। মাত্র ৩-৪ বছর বয়সেই মেয়ের মা-দাদি এই ব্যান্ডেজ করে দেন। এর জন্য প্রথমে উষ্ণ ভেষজ ও পশুর রক্তে পা ভিজিয়ে রাখা হতো। কারণ এসব উপকরণ ব্যবহার করলে পা আরো নরম হয়। এরপর কেটে ফেলা হত নখ। তার পর পায়ের আঙুলগুলো নিচের দিকে বাঁকিয়ে ভেঙে ফেলা হত। হাড় ভাঙার যন্ত্রণায় শিশুরা অনেক আকুতি মিনতি করলেও কোনো ছাড় পাওয়া যেত না। সেই অবস্থাতেই শক্ত ব্যান্ডেজে মুড়ে ফেলা হত পা। ব্যান্ডেজ এমন ভাবে বাঁধা হত, যাতে ভাঙা হাড়া জোড়া লাগার কোনো অবকাশই না থাকে।

এখানেই শেষ নয়। বেশিরভাগ শিশুর পায়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেত। পচন ধরারও ঘটনা অহরহ শোনা যেত। এতে উদ্বিগ্ন না হয়ে খুশিই হতেন পরিবারের লোকজন। কারণ পায়ে পচন ঝরলে, আঙুল খসে পড়ে যাবে। তাতে পা আরো ছোট লাগবে! অনেকের পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধার সময় কাঁচের টুকরো বা আলপিন লাগানো হতো। এতে খুব দ্রুত পায়ে পঁচন ধরে।

চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো এই প্রথা পালিত হয়

চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো এই প্রথা পালিত হয়

পা ছোট না হলেও ছিল বিপদ! কারণ পায়ের পাতা বড় হলে বিয়ে হতো না। পা ছোট হলেও তো বিপদ থেকে রক্ষা নেই! পায়ের পাতা ছোট হওয়াতে মেয়েরা ঠিকমতো হাঁটতে পারত না। ফলে চাপ পড়ত নিতম্বের পেশির ওপর। এর ফলে যৌনাঙ্গের পেশি শক্ত হতো। ফলে সঙ্গমের সময় বেশি সুখ পেত স্বামী। তবে দিন শেষে কষ্ট নারীকেই করতে হতো।

নির্মম কু-প্রথার শেষ

বিংশ শতকে মুসলিম এবং পশ্চিমী সমাজ সংস্কারকরা এই নির্মম প্রথার বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তবে রাজতন্ত্রের অবসানের পর চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে। ১৯১২ সালে আইন করে পা ছোট করার কুপ্রথা নিষিদ্ধ হয়। লুকিয়ে কেউ পা ছোট করছে কি-না দেখতে সেই সময় সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু কর্মীও নিয়োগ করা হয়। তবে শেষ বললেই কি আর শেষ হয়? এখনো চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও কোথাও এই প্রথা দেখা যায়।