বান্দরবানে বর্ষায় পাহাড়ি স্বর্গ
নিউজ ডেস্ক:
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩১ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
বান্দরবান শহরটা ছোট। চারপাশেই পাহাড় আছে। যারা পাহাড় পছন্দ করে তারা শহরটার প্রেমে পড়তে বাধ্য। বাস থেকে নেমে আমরা অটো নিয়ে চলে গেলাম রুমা বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকে এক ঘণ্টা পর পর বাস ছেড়ে যায়। আমরা ১০ মিনিটের জন্য একটা বাস মিস করেছিলাম, তাই ৫০ মিনিটের মত বসে থাকতে হয়েছিল। রুমা যাওয়ার জন্য চাঁদের গাড়িও পাওয়া যায়। তাতে খরচটা একটু বেশি পড়বে।
বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথটা পুরোটাই পাহাড়ের ঢাল দিয়ে গিয়েছে। বাস ছাড়ার কিছু সময় পরই সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠবে। দূরে পাহাড়, পাশে পাহাড়ি খাদ। দেখার চোখ থাকলে আসলেই অভিভূত হওয়ার মত অনেক কিছু আছে। এভাবে চলতে চলতে রুমা বাজার চলে আসবে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর। রুমা বাজার আসার পথে আর্মি ক্যাম্পে একবার নামতে হবে চেকিং- এর জন্য। আরেকবার যাত্রা বিরতি ১০ মিনিট।
রুমা বাজার থেকে আমরা দুপুরের খাবার ও বারবিকিউ-এর জন্য যা যা লাগে সেগুলো কিনে নিয়েছিলাম। অবশ্য কাঠ কিনতে হয় না, বগা লেকেই কিনতে পাওয়া যায়। আমাদের গাইড আমাদের সঙ্গে রুমা বাজার থেকেই ছিল। সেনাবাহিনী ক্যাম্পে আবার অনুমতি নিয়ে আমরা বগা লেকের জন্য চাঁদের গাড়িতে উঠি। আমারা ৯ জন ছিলাম, তাই আমরা আরেকটা টিমের সঙ্গে যুক্ত হই। তারা ছিল ৫ জন। চাঁদের গাড়িতে ১৩-১৪ জনের মত যেতে পারে। টিম মেম্বার কম থাকলে অন্য একটা টিমের সঙ্গে চাঁদের গাড়িতে শেয়ারে উঠলে খরচ কিছুটা কমে।
রুমা বাজার থেকেই মূল অ্যাডভেঞ্চার শুরু। প্রথমেই অনেকটা খাড়া পথ পার হতে হয়। প্রথমবার একটু ভয় লাগলেও কিছু সময় পর তা কেটে যায়। কারণ একটু পরপরই রাস্তা ৫০ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রীর কোণে উপরে উঠে আবার নিচে নামে। আর এই ঢালগুলোও পার হতে অনেকটা সময় লাগে। প্রথমবার মনে হতে পারে, এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কী হতে পারে? কিন্তু কিছু সময় পর এতোটাই রোমাঞ্চকর লাগে, যা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমাদের জন্য বোনাস ছিল মৌসুমটা। দূরের আকাশে প্রায়ই দেখতে পাচ্ছিলাম মেঘ জমেছে। পাহাড়ের চূড়ায় যে পরিমান মেঘ জমছিল, মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ের চূড়ায় তুষার জমেছে। এক ঘণ্টার চেয়ে একটু বেশি সময় লেগেছিল বগা লেক পৌঁছাতে।
বৃষ্টিতে বগা লেক
বগা লেক এসে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম! আমরা আসলে ছবিতে যা দেখি বা রিভিউতে যা পড়ি তার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর! কেউ কখনো হয়তো লিখে প্রকাশ করতে পারবে না জায়গাটা কেমন। যারা ভ্রমণপ্রিয় মানুষ তাদের অবশ্যই একবার বর্ষাকালে বগা লেকে আসা উচিত। আমরা যখন বগা লেকে পৌঁছলাম তখন থেকেই একটু একটু বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টির জন্য বগা লেকের পানির সবুজ রংটা যেমন একটু বেশিই সবুজ লাগছিল। তেমনি সাদা সাদা মেঘ পাহাড়গুলোর সবুজ রঙটাকেও আসতে আসতে ঢেকে দিচ্ছিল। আসলে কোনো ভাবেই সেই রূপ বর্ণনা করা যাবে না। আর্মি ক্যাম্পে সাইন করে আমরা আমাদের কটেজে ব্যাগগুলো রেখেই বের হয়ে গেলাম। আমাদের কটেজ ছিল একদম লেকের পাশেই। বারিন্দা থেকে যে ভিউ পাচ্ছিলাম তা রেখে বাইরের বৃষ্টিতে যেতে ইচ্ছা করছিল না। পুরো লেকটাই দেখতে পাচ্ছিলাম, সঙ্গে ছিল সামনের পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা মেঘরাশি। কিন্তু অপরূপ বৃষ্টিকে মিস করতে চাইনি কেউ।
বগা লেকে গোসল করবো তা আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। যদিও লেকে নামা পুরপুরি নিষেধ। আমরা যখন কটেজ থেকে বের হলাম তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বাংলাদেশের বৃষ্টি আর তাও পাহাড়ে। বাকিটা কল্পনা করে নিলেই সবচেয়ে ভাল হয়। লেকের পাশের উঁচু পাহারটা তখন মেঘে ছেয়ে গেছে। যদিও ইচ্ছে ছিল না লেক থেকে উঠে যাই! তারপরও উঠে এলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায়। লেকের পানি হালকা গরম থাকে। তাই বৃষ্টির সময় অন্য রকম একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। কনকনে ঠাণ্ডা বৃষ্টির পানি আর লেকের উষ্ণ ছোঁয়া।
সন্ধ্যায়ও বৃষ্টি ছিল তাই কটেজেই থাকতে হয়েছে। সন্ধ্যার রঙ সঙ্গে আঝোর ধারার বৃষ্টি। সামনে লেক আর মেঘে ঢাকা আকাশ। স্তব্ধ একটা পরিবেশ। বৃষ্টি হলে তেমন কিছু করার থাকে না কটেজে। নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না। রাতের আধার নেমেছিল সেদিন ভালো ভাবেই। বারান্দায় বসে থাকতে থাকতে ক্লান্তিও নেমে এসেছিল চোখ জুড়ে। ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়েছিলাম হয়তো। বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল নাকি আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরপরই। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকায় লেক দেখা যাচ্ছিল না। রাতে ছিলো আমাদের আড্ডা আর গলা ছেড়ে গান গাওয়া। অসাধারণ মুহূর্ত ছিল। পরের দিনের গল্পটা নাহয় আগামীকাল শুনুন!