ছেলের জন্য ৪৪ বছর ধরে রোজা রাখা সেই মা আর নেই
নিউজ ডেস্ক:
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩২ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
সন্তানের জন্য দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে রোজা রাখা সেই মা ভেজিরন নেছা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সোমবার (৮ জুলাই) বার্ধক্যজনিত কারণে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুরে নিজ বাড়িতে আনুমানিক বিকেল পাঁচটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ৩ ছেলে মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ইসলাম ধর্মের বিধান মতে বছরে কয়েকটি রোজা ছাড়া দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর রোজা রেখেছেন তিনি। বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যাওয়ার পর প্রায় দেড়মাস পর তিনি নিয়ত করেন ছেলেকে ফিরে পেলে যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই রোজা রাখবেন। সেই থেকে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রোজা রেখে গেছেন।
গ্রামবাসী জানিয়েছে, ১৯৭৫ সাল। তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলামে বয়স ১১ বছর। সে একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েও পাওয়া যায়নি। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ এবং দরগায় ১৩ থেকে ১৪টি স্থানে খাবারের আয়োজন করা হয়। তখন মানুষের খুব অভাব চলছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, হয়তো কোনো জায়গায় খাবার না পেয়ে মসজিদ বা দরগায় খানা খেতে আসবে। তবুও আসেনি সে।
এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজনও তাকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। পরিবারের লোকজন ছাড়াই সখিরন নেছা একা একা ছেলেকে খুঁজে বেড়াতেন। প্রায় দেড়মাস পর রমজান মাস আসলে রোজা থাকা অবস্থায় একদিন সন্ধ্যার আগে গ্রামের কাজীপাড়া জামে মসজিদের কাছে ছেলেকে খুঁজতে গেলেন। না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসছিলেন। মসজিদের কাছে আসতেই মসজিদে হাত দিয়ে পণ করেন, ছেলেকে ফিরে পেলে যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন রোজা রাখবেন। মা ফিরে এসে দেখতে পান ছেলে শহিদ বাড়িতে এসেছে। সেই থেকে তিনি দীর্ঘদিন রোজা রেখেছেন।
বাজার গোপালপুর গ্রামের মাসুম শেখ জানান, ‘আমার বুদ্ধি-জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখছি ভেজিরন নেছা ওরফে ভোজা (বুবু) রোজা রাখছেন। শত অভাব অনটনের মধ্যে পরের বাড়িতে কাজকর্ম করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেছে। দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর ইসলাম ধর্মের বিধান মেনে রোজা রেখে আসছেন।’
তিনি বলেন, মা তো মা-ই। মায়ের তো কারো সাথে তুলনা হয় না। তবে ছেলের জন্য যে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা একমাত্র মা বলেই সম্ভব হচ্ছে। তার মতো আর মা আছে বলে আমার জানা নেই।
ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, ‘প্রত্যেক মা-ই তার সন্তানকে ভালোবাসে। তবে আমার মা আমার জন্য সারা জীবন রোজা রাখবেন বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- পৃথিবীতে এমন মা আছে বলে আমার জানা নেই। এমন মা পাওয়া সত্যিই গর্বের বিষয়।’
তিনি তার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।