বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মৃত্যুর ৫৮ বছর পর চোখের পলক ফেলে ‘স্লিপিং বিউটি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:৩৪ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

প্রতিটি ধর্ম এবং সভ্যতায় মানুষের মৃত শরীর নিয়ে রয়েছে আলাদা আলাদা রীতি- রেওয়াজ। যেমন হিন্দু ধর্মে মৃত শরীরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় আর যে জায়গাটিতে পুড়ানো হয় তাকে বলা হয় শ্মশান। অন্যদিকে, ইসলাম ধর্মে মৃত মানুষদের কবরে শায়িত করা হয়। আবার হাজার বছরের পুরানো মিশরে মানুষ মারা গেলে তাদের সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে কাঠের বাক্সে সংরক্ষণ করা হতো এবং কিছুদিন পরেই মৃত মানুষটি মমি হয়ে যেতো। আমরা হয়তো অনেকেই হলিউডের সিনেমাতে মমিকে হাঁটতে, চলতে এমনকি মারামারির দৃশ্যতেও দেখেছি। কিন্তু আজ আমরা জানবো এমন পাঁচটি মমি সম্পর্কে যেগুলোর প্রত্যেকটির বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত রহস্য জাগানিয়া-

৫. রোজালিয়া লোম্বার্ডো

ইতালিয়ান মারিও লোম্বার্ডোর প্রথম কন্যা সন্তান রোজালিয়া লোম্বার্ডো মাত্র দুই বছর বয়সেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এত অল্প বয়সে মৃত্যু রোজালিয়ার বাবা-মাকে ভীষণভাবে বেদনাহত করেছিলো। মেয়ের মৃত্যু শোক কিছুটা হলেও কমাতে সেই মৃতদেহকে মমি করে রাখে। এর ৫৮ বছর কেটে যায় অতঃপর যখন তারা মৃতদেহটিকে অন্য একটি কাঠের বাক্সে হস্তান্তর করতে গেলো তখনই তারা দেখল অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা। তারা দেখল রোসালিয়া তার কোমল চোখের পলক ফেলছিলো বাক্স পরিবর্তনের সময়। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে অনেক প্রামাণ্যভিডিও তৈরি হয়েছিলো। লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিলো রোজালিয়ার আরেকটি পলক দেখতে। এই ঘটনার পর থেকেই রোজালিয়ার এই মমিটিকে বলা হয় ‘স্লিপিং বিউটি’। বিজ্ঞানীরা যদিও বলে থাকে বাতাসের আর্দ্রতার জন্য সেদিন সেই অদ্ভুতুরে ঘটনাটি ঘটেছিলো তবে কোনো বিজ্ঞানী বা সংস্থাই এই ঘটনার সর্বসম্মত যুক্তিপূর্ণ কোনো ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি। 

৪. মমি জুয়ানিতা

এই মমিকে ‘আইস মেড’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। মূলত একটি বরফের পাহাড়ে এই মমিটি পাওয়ার পরে থেকেই এটির এমন নামকরণ। এই মমিটি পরীক্ষা নীরিক্ষার পরে জানা যায়, ১৪৫০  থেকে ১৪৮০ সালের দিকে দেবতাকে খুশি করার জন্য ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরীকে বলি দেয়া হয়। এই লাশটি ছয় হাজার মিটার উঁচু এক বরফের পাহাড়ের উপরে পাওয়া যায়। এত লম্বা সময় ধরে মেয়েটির মৃতদেহ বরফে সুরক্ষিত থাকার কারণে মেয়েটির শরীর অনেকাংশেই অবিকৃত ছিলো এবং দেখে মনে হচ্ছিলো কেউ যেন বসে ঘুমিয়ে আছে। কি অবিশ্বাস্য ঘটনা! 

৩. সানপেদ্রো মমি

এই মমিটি আবিষ্কারের ঘটনা ১৯৩২ সালের যখন দু’জন ব্যক্তি খনিতে গুপ্তধন খুঁজতে গিয়েছিলো। কিন্তু খনিতে গুপ্তধন পাওয়া তো দূরের কথা সেখানে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের কারণে তারা তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে কাকতালীয়ভাবে এমন একটি কক্ষে প্রবেশ করে যেখানে তারা একটি কাঁচের বাক্সের ভিতরে মাত্র সাড়ে ৪ ইঞ্চি এবং ৪০০ গ্রাম ওজনের একটি মমির সন্ধান পায়। মমিটি সেখানে ধ্যান করার মতো করে বসেছিলো। কিন্তু এই মমিটি মোটেই মানুষের মতো ছিলো না বরং এটিকে দেখতে ঠিক এলিয়েনের মতো লাগছিলো। কিন্তু অতঃপর যখন বিজ্ঞানীরা মমিটিকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে এবং ডিএনএ পরীক্ষা করে তখন নিশ্চিত হয় সেটি একটি মানুষই ছিলো। এর থেকেই ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে খাটো মানুষদের অনেক সমাদর করা হতো।

২. সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরানো মমি

২০১২ সালে একদল বিজ্ঞানী এই সাড়ে তিন হাজার বছর আগের মমিটি খুঁজে পায়। এত পুরোনো মমি জেনে বিজ্ঞানীরা সেটিকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করার জন্য কৌতুহলী হয়ে যায়। গবেষণার সময় জানা যায়, তৎকালীন সময়ে সেই মৃত নারীর মস্তিষ্কে কিছু একটা ঢোকানো হয়েছিল। যা সকল গবেষকদের অবাক করে দেয়। এত প্রাচীন সময়ের চিকিৎসা পদ্ধতিতে এত সাহসিকতা এবং দক্ষতার পরিচয় দেয়া হয়েছিলো। এ দেখে গবেষকদের চোখ সত্যিই কপালে উঠে গিয়েছিলো। 

১। সাত শত বছরের আগের মমি

এই মমিটি পাহাড়ে বসবাস করা ইনকা সভ্যতার একটি মেয়ের মমি। ৭০০ বছর পূর্বে এই মেয়েটির মহামারী এক রোগে মৃত্যু হয়। কিন্তু যখন মেয়েটির মমি খুঁজে পাওয়া যায় তখন দৃশ্যমান হয় অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর ঘটনা। দৃশ্যমান হয় যে, মেয়েটির শরীরের মাংসপিন্ড বেশ টাটকা ছিলো। ৭০০ বছর পরেও তার হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুস থেকে রক্তও বের হচ্ছিল ৷ সৃষ্টিকর্তার এই অলৌকিক ক্ষমতা সত্যিই অবাক করে দিয়েছিল সকলকে।