ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ: ব্লুমবার্গ
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৩০ এএম, ১০ জুলাই ২০১৯ বুধবার
চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ। গণমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের এই বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় ধরনের সুযোগ পাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান নিউএজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম জানান, গত ৩০ বছরে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে তাদের পণ্য। সুইডিশ ব্র্যান্ড ‘হেনস অ্যান্ড মুরিজ এবি’তে পোশাক সরবরাহকারী এই প্রতিষ্ঠানটি তিন দশক ধরে ইউরোপের সঙ্গে ব্যবসা করছে। তবে সম্প্রতি তারা মার্কিন প্রতিষ্ঠান ম্যাসিস ইনকর্পোরেশন ও গ্যাপ ইনকর্পোরেশন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
আরেক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি দ্বিগুন হবে বলে প্রত্যাশা করছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডেভিড হাসানাত জানান, ১ জুলাই থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানটিতে যে পরিমাণ অর্ডার আসতে শুরু করেছে, তাতে মার্কিন বাজারে ২৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির চিন্তা করছেন তারা।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রেকর্ড ৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর প্রধান কারণ চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ বিলিয়ন ডলার ট্যারিফ ধার্য। এমন প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে মার্কিন অর্ডার বেড়েছে।
আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্ডারের জন্য যোগাযোগের হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে। চীনা পণ্যে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বাড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডারগুলো বাংলাদেশে চলে আসছে।’
গত মে মাসে ম্যাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত প্রায় দুই বছর ধরেই চীনের বাইরে নিজেদের উৎপাদন সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবছে তারা। একই মাসে গ্যাপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারাও চীন থেকে গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার চিন্তা করছে।
এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, আগামী ২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়বে ৮ শতাংশ। আর এতে বড় ভূমিকা রাখবে তৈরি পোশাক খাত। বর্তমানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে ৪০ লাখ লোক কাজ করছে এবং মোট দেশজ উৎপাদনের ১৩ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।
আগামী রাউন্ডে চীনা পণ্যে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ট্যারিফ আরোপ করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর এতে চীনা তৈরি পোশাক শিল্পে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অবশ্য এমন খবর বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পোশাক তৈরিকারদের জন্য সুসংসবাদ হয়ে আসছে। চীনের বিকল্প হিসেবে এই দুই দেশই পছন্দ মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর।
এদিকে এরইমধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি করাখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে নিউএজ গ্রুপ। আগামী চার মাসের মধ্যে নতুন কারখানাটি উৎপাদনে যাবে।
তবে পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা বাধাবিপত্তিও আছে আছে বাংলাদেশে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশে অবস্থান ১০৩তম। অপরদিকে চীনের অবস্থান ২৯তম। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম মনে করে, বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইনের অগ্রগতির জন্য পোশাক কারখানাগুলোকে আধুনিকীকরণ, নতুন হাইওয়ে নির্মাণ ও বন্দরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো জরুরি।
অবশ্য ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ডেভিড হাসানাত বলছেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যেকোনও বড় আকারের বাণিজ্যের জন্য আমরা প্রস্তুত।’