এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:১৯ এএম, ১১ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋন জালিয়াতি ও ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এস কে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শামীম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের স্থায়ী বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান, একই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, সান্ত্রী রায় ওরফে সিমি ও তার স্বামী রনজিৎ চন্দ্র সাহা।
মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত।
সাবেক প্রধান বিচারপতি বিদেশে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের আইনে সব ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফারমার্স ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার কথা গত বছর অক্টোবরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়, ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শুলশান শাখা ও প্রধান কার্যালয়। ঘটনার সময় দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে দণ্ড বিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২), (৩) ধারায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ নিয়ে একই দিনে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন। পরে ওই টাকা ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অস্বাভাবিক নগদে এবং চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য হিসাবে হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। পাশাপাশি ওই টাকার উৎস ও অবস্থান গোপনের মাধ্যমে পাচার বা পাচারের চেষ্টায় সম্পৃক্ত ছিলেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, জনৈক মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি চলতি হিসাব খোলেন। এর পরদিনই তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংকে হিসাব খোলা এবং ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই তাদের ঠিকানা বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই বাড়িটি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যক্তিগত বাড়ি। ঋণ আবেদনে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসাবে রঞ্জিত চন্দ্র সাহার স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের সাভারে অবস্থিত ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করেন। তারা দুজনও সাবেক প্রধান বিচারপতির পূর্বপরিচিত ও ঘনিষ্ঠজন।
এজাহার বলছে, ঋণসংক্রান্ত আবেদন দুটি কোনো রকম যাচাই-বাছাই, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণ প্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে সাবেক এমডি এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ নীতি অনুযায়ী ঋণ দুইটির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি এ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই বা নির্দেশনা না দিয়ে ওই ঋণ প্রস্তাব দুটির অনুমোদন দেন।
ঋণ অনুমোদন হওয়ার পরদিনই আবেদনকারীদের আবেদনের ভিত্তিতে ঋণ হিসাবে অনুমোদিত চার কোটি টাকার পৃথক দুটি পে-অর্ডার সাবেক প্রধান বিচারপতির নামে ইস্যু করা হয়। পরে ওই পে-অর্ডার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিমকোর্ট শাখায় এস কে সিনহার হিসাবে জমা হয়। তিনি বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক ক্যাশ ও চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন।