ক্যান্সারের কারণ চিনিযুক্ত পানীয়! জানুন কি বলছে গবেষণা?
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৪৩ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
শরীরের ক্লান্তি ও প্রশান্তির জন্য সবাই বিভিন্ন পানীয় খেয়ে থাকে। আর তা হতে পারে কোনো ফলের রস বা চিনি মিশ্রিত পানীয়। তবে জানেন কি, চিনিযুক্ত পানীয়র ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন। ক্যান্সার হওয়ার অন্যান্য কারনের মধ্যে চিনিযুক্ত পানীয়ও একটি। চলুন জেনে নেয়া যাক এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য-
ফরাসী বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফলের রস ও ফিজি ড্রিঙ্কের মতো চিনিযুক্ত পানীয় খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। পাঁচ বছর ধরে এক লাখেরও বেশি মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এই ধারণা পেয়েছেন। আর এই গবেষণার ফলাফল ব্রিটিশ মেডিকেল জর্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্যারিসে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মনে করছেন, রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া-ই ক্যান্সারের জন্যে দায়ী হতে পারে।
তবে গবেষণায় এরকম কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যার ভিত্তিতে এটাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা আরো গবেষণার উপর জোর দিয়েছেন।
জেনে নিন, চিনিযুক্ত পানীয় কোনগুলো?
গবেষকদের মতে, যেসব পানীয়তে ৫% এর বেশি চিনি আছে সেগুলোই চিনিযুক্ত পানীয়। এসবের মধ্যে আছে ফলের রস, সফট ড্রিঙ্ক, মিষ্টি মিল্কশেক, এনার্জি ড্রিঙ্ক, চিনি দেয়া চা ও কফি। এমনকি ফলের রসে বাড়তি চিনি না মেশালেও সেটা চিনিযুক্ত পানীয় হিসেবেই ধরা হয়েছে।
গবেষকরা বাজারে জিরো-ক্যালোরি বলে যেসব পানীয় বিক্রি হয় সেসব ডায়েট ড্রিঙ্ক নিয়েও পরীক্ষা চালিয়েছেন এবং দেখেছেন এগুলোর সঙ্গে ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক নেই। এসব পানীয়তে চিনির বদলে কৃত্রিম সুইটেনার মেশানো হয়।
ঝুঁকির পরিমাণ কতোখানি?
গবেষণায় বলা হয়েছে, দিনে যদি ১০০ মিলি লিটার চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়া হয়, যা সপ্তাহে দুই ক্যান পানীয়র সমান, তাহলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১৮% বেড়ে যায়। এরকম প্রতি ১,০০০ জনে ২২ জন ক্যান্সার রোগী পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যে ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের একজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ড. গ্রাহাম হুইলার বলেছেন, "এ থেকে ধারণা করা যায় যে চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়ার সঙ্গে ক্যান্সারের একটি সম্পর্ক আছে। তবে এ বিষয়ে আরো বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
এই গবেষণার সময় মোট ২,১৯৩ জন ক্যান্সার রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৬৯৩ জন স্তন ক্যান্সার, ২৯১ জন প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং ১৬৬ জন মলনালী সংক্রান্ত বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত।
এই প্রমাণই কি যথেষ্ট?
না। যেভাবে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে তা থেকে এর একটি ধরন বা প্যাটার্ন চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান থেকে এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
চিনিযুক্ত পানীয় বেশি পান করার কারণে যে ক্যান্সারের রোগী বেশি পাওয়া গেছে গবেষণায় সেটি দেখা যায় নি। তাতে বলা হয়নি, যারা দিনে প্রায় ১৮৫ মিলি লিটার বেশি পান করেছে তাদের মধ্যে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা যারা দিনে ৩০মিলি লিটারেরও কম পান করেছে তাদের তুলনায় বেশি। ফলে এই গবেষণা থেকে স্পষ্ট করে বলা যায় না যে চিনিযুক্ত পানীয় ক্যান্সারের কারণ। তবে যারা চিনিযুক্ত পানীয় বেশি খান তাদের মধ্যে আরো কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা যেতে পারে যেসব থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ড. অ্যামেলিয়া লেক, টেসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, গবেষণাটি যদিও ক্যান্সার ও চিনিযুক্ত পানীয়র মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেয়নি, তারপরেও চিনি খাওয়া যে কমিয়ে দেয়া দরকার, এই গবেষণায় সেই গুরুত্ব উঠে এসেছে। তাই আমাদের প্রতিদিনের ডায়েটে চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়া খুবই জরুরি।
তাহলে কি স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া?
কোনো কোনো ক্যান্সারের জন্যে প্রধান কারণ স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া। এবং খুব বেশি পরিমাণে চিনিযুক্ত পানীয় খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে।তবে গবেষণায় যা বলা হয়েছে এখানেই তার শেষ নয়।
গবেষক মাটিলডে তোভির বলেন, অতিরিক্ত পরিমাণে চিনিযুক্ত পানীয় খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় এবং ওজন বেড়ে যায় - এটা একটা অংশ মাত্র। কিন্তু এর যে আরো বিষয় আছে সেটা ব্যাখ্যা করা হয়নি।
একই ভাবে ফরাসী গবেষকরা বলছেন, রক্তে চিনির মাত্রা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন পানীয়তে এমন কিছু রাসায়নিক মেশানো হয়, রঙিন করে তোলার জন্যে, সেগুলোও শরীরের জন্যে ক্ষতিকর, সেগুলোও ক্যান্সারের জন্যে দায়ী হতে পারে। তবে গবেষণাতে এই প্রশ্নেরও জবাব নেই।
প্যারিসের গবেষকরাও বলছেন, তাদের ফলাফলকে নিশ্চিত ভাবে ধরে নিতে হলে আরো বিস্তৃত পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তারা বলছেন, চিনিযুক্ত পানীয়র সঙ্গে হৃদরোগ, ওজন বেড়ে যাওয়া, স্থূলতা, ডায়াবেটিস- এসবের সম্পর্ক আছে। এজন্যে তারা চিনিযুক্ত পানীয়র ওপর আরো কর বাড়ানোর কথাও বলেছেন। তারা বলছেন, এর ফলে লোকেরা চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হতে পারে।