বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মহাকাশেই হয় তার নির্মম মৃত্যু

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৩৯ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

প্রত্যেকেরই ছেলেবেলার গল্পগুলো ভিন্ন। একেকজনের শখ আহ্লাদ ,ভালো লাগা মন্দ লাগায় ভীষণ পার্থক্য। সেই ছেলেবেলায় আমরা কেউ কেউ মাঠে ঘাটে ছুটে আনন্দ পেতাম, আবার কেউ একলা ঘরেই বেশ মানিয়ে নিতো। আবার কেউ কেউ রাতের আকাশের তারা দেখতো। অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবত কী আছে ওই জগতে? 

ছেলেবেলার হাজারো কৌতূহলের পেছনেই কিন্তু আমরা বড়বেলায় ছুটে যাই; ঠিক যেমন করে ছুটতে চেয়েছিলেন ভারতের নারী মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা। আজ চলুন জেনে নেই এই বিখ্যাত সাহসী মানবীর জীবনের রহস্যময় অধ্যায় সম্পর্কে। কল্পনা ছিলেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী নারী ব্যক্তিত্ব যিনি এই পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ ছেড়ে বিশাল মহাকাশে পাড়ি জমান। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সে প্রথমই হয়ে ওঠে শেষ। পৃথিবীর পৃষ্ঠে, নিজ মাতৃভূমি ভারতবর্ষে আর ফেরা হয়নি তার।

১৯৬২ সালের ১৭ ই মার্চ ভারতের কার্নালে জন্ম এই সাহসী নারীর। বর্তমানে ভারতের হারিয়ানা রাজ্যের ভেতরে পড়েছে স্থানটি। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এই নারী কৌতূহলী ছিলেন আকাশের আরো উপরের পৃষ্ঠ নিয়ে। যেখানে আছে তারা, নক্ষত্র, গ্রহাণু, ছায়াপথ আরো কত কী? কল্পনার এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো তার বাবা মা এবং স্কুল শিক্ষকদের। তার হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে তাদেরও বুঝি মাঝে মাঝে দম ফুরাতো!

 

তবুও আটকে ছিলেন না কল্পনা চাওলা। সেই ছোটবেলা থেকেই এরোপ্লেনের ছবি আঁকতেন তিনি। ছোট্ট কল্পনা তারা, গ্রহ, ছায়াপথ সব যেন নামিয়ে আনতেন সাদা খাতার পাতায়। সেই গোপন ইচ্ছে বা শখকে গোপনে রেখেই পড়াশুনা চালিয়ে যান তিনি। পাঞ্জাবের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সম্মান শেষ করেন  কল্পনা। অতঃপর পাড়ি জমান আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষালাভের স্বপ্ন পূরণে। 

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এবং ইউনিভার্সিটি অব কলোরোডোতে তার অসমাপ্ত পড়াশুনার অধ্যায় চুকিয়ে ফেলেন কল্পনা। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি দেখা পান জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিনটির। যেদিন তিনি ডাক পেয়েছিলেন আমেরিকার বিখ্যাত স্পেস এজেন্সি নাসা থেকে; যেটির স্বপ্ন তিনি দেখছিলেন সেই ছেলেবেলার এরোপ্লেনের ছবি আঁকার সময় থেকে।

 

কল্পনা চাওলা এবং তার দল

কল্পনা চাওলা এবং তার দল

১৯৯৭ সালের দিকে প্রথমবারের মতো কল্পনা চাওলা তার স্পেস শ্যাটল উড়ানোর সুযোগ পান কলম্বিয়া থেকে। অতঃপর ২০০০ সালের দিকে নাসা থেকে তাদের দ্বিতীয় স্পেস মিশনের লক্ষ্যে কল্পনা চাওলাকে নির্ধারণ করা হয়েছিলো; যে সময়টির জন্য আসলে হাজার দিন অপেক্ষা করেছিলেন এই নারী মহাকাশচারী। 

 

সেই স্পেস মিশনের জন্যে কল্পনার সাথে নির্ধারিত সদস্য ছিলেন আরো ৬ জন। তবে কিছু টেকনিক্যাল ইস্যুর কারণে তাদের ফ্লাইট পিছিয়ে নেয়া হয় ২০০৩ সালের দিকে। একই বছরের ১৬ জানুয়ারিতে কল্পনা চাওলা এবং তার দল মহাশূন্যে পৌঁছায় কোনো ধরণের বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই। কল্পনা চাওলা এবং তার দল প্রায় ৮০ ধরণের অভিজ্ঞতা নেয়ার পরই সাহস করেছিলেন মহাকাশ পাড়ি দেয়ার। 

তবে দুর্ভাগ্যকে কেউ কী সামলে নিতে পারেন? পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়েই নাকি তাদের স্পেস শ্যাটলে সমস্যা দেখা দিচ্ছিলো। স্পেস শ্যাটলের বাইরের ট্যাংক থেকে একটি ফোম ইন্সটলেশনের একটি টুকরো ভেঙে যায়। যখন এই স্পেস শ্যাটল করেই কল্পনা চাওলা এবং তার দল মহাকাশ পাড়ি জমাচ্ছিলেন তখনই এর বাইরের অংশ নষ্ট হতে শুরু করে। কিছু ইঞ্জিনিয়ার এই ড্যামেজ হয়ে যাওয়া স্পেস শ্যাটলকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও কেউ কেউ বলছিলেন এটা ছিলো মারাত্মক একটি ঝুঁকি। 

নাসার বিজ্ঞানীরা কল্পনাদের মহাকাশে পাড়ি জমানোর পর এটি জানতে পারলেও তৎক্ষণাৎ মহাকাশচারীদের জানতে দেননি। তারা চেয়েছিলেন যাই হোক না কেন, তাদের মিশন যাতে সফল হয়। তবে সত্যিটা হলো, তখন তারা কিছু চাইলেও করা সম্ভব ছিলো না। ১৬ দিন পর মিশন শেষে পৃথিবীতে ফেরার পথে সেই স্পেস শ্যাটল কিছুতেই ঠিক থাকতে পারছিলো না। প্রচণ্ড গতিতে তাল না মিলাতে পেরে স্পেস শ্যাটলটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারী এই দুর্ঘটনায় মারা যায় ভারতের প্রথম নারী মহাকশচারী কল্পনা চাওলা এবং তার দল। সেই সাথে পুরো ভারতজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।