ধর্ষণ মামলার বিচারে হাইকোর্টের সাত নির্দেশনা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:১৬ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার
ধর্ষণ মামলার বিচার ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে বিচারকদের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। একইসঙ্গে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে একটি মনিটরিং সেল গঠনসহ ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একাধিক ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন সংক্রান্ত আবেদনের শুনানির সময় সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
শুনানিতে আদালত বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিশুরা ধর্ষণের শিকার হবে, কিন্তু বিচার হবে না, তা শুধু দুঃখজনকই নয়, হতাশাজনক।
গত বছর রাজধানীর ডেমরাতে চকলেট খাওয়ানোর নাম করে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে। এর ১৬ মাসেও এ মামলার বিচার শুরু হয়নি। এ রকম তিনটি মামলার শুনানি শেষে বিচারহীনতা সংস্কৃতির দুর্নাম ঘুচাতে ৭ দফা নির্দেশনা দিলেন দেশের উচ্চ আদালত।
এই সাত দফা নির্দেশনা হলো:
১. দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৮০ দিনের মধ্যে যাতে দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।
২. ট্রাইব্যুনালগুলোকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ এর ধারা ২০-এর বিধান অনুসারে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে এক টানা মামলা পরিচালনা করতে হবে।
৩. ধার্য তারিখে সাক্ষী উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিমকোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবেন। সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটররা মনিটরিং কমিটিতে থাকবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
৪. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সংগত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে আনতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।
৫. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের উপর দ্রুত সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন।
৬. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিসিয়াল সাক্ষীরা যেমন, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
৭. আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন।
আদালতের এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদেশের কপি স্বরাষ্ট্র সচিব,আইন সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেলকে পাঠাতে বলা হয়েছে।