কী নির্দেশনা নিয়ে ফিরছেন ডিসিরা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৪৪ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার
পাঁচদিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শেষ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুতে ডিসিদের দেয়া হয়েছে নানা দিক-নির্দেশনা। সেসব নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডিসিরা।
এর আগে গত রোববার (১৪ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তেজগাঁও কার্যালয়ে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এদিন জেলা প্রশাসকদের ৩১টি নির্দেশনাও দেন তিনি।
এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরো সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা, কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্মেলনের উদ্বোধনের পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মোট ২৯টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন হয় ২৪টি। এসব অধিবেশনে বিভিন্ন ইস্যুতে ডিসিদের নানা নির্দেশনা দেন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীরা।
এরমধ্যে রোববার (১৪ জুলাই) সম্মেলনের প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ সমিল ও ইটভাটা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও বায়ুদূষণ, পাহাড় রক্ষা এবং সমিল নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে। এসব অবৈধ ইটভাটা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। অবৈধ কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না।
এছাড়া এদিন অনুষ্ঠিত আরেকটি অধিবেশনে সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচিতে যে-ই অনিয়ম করুক না কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
অন্যদিকে, সোমবার (১৫ জুলাই) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিসিদের মনিটরিং করার নির্দেশনা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান দেয়ার প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর আওতায় ১৬ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে। কাজ ঠিকমতো যাতে এগোয়, সেজন্য তা মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সম্মেলনের তৃতীয় দিনে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে ডিসিদের নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এছাড়া বুধবার সম্মেলনের চতুর্থ দিনে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে নজরদারি রাখতে ডিসিদের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন কি না, সে বিষয়টি নজরে রাখতে ডিসিদের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, এদিন ভূমি উদ্ধারে ডিসিদের পুরস্কারের ঘোষণা দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন, সরকারি জমি উদ্ধার আরো কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে। তারপরও যে যত বেশি জমি উদ্ধার করতে পারবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনে মাঠ প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত করতে ডিসিদের নির্দেশ দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। একইসঙ্গে কোনো ভোগান্তি ছাড়া জনগণ যাতে সেবা পায় তা নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেন তিনি।
এদিন, আরেকটি অধিবেশনে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ বাস্তবায়নে ডিসিদের নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
যা যা চাইলেন ডিসিরা:
সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরাও বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
# জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক।
# সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়।
# মোবাইল কোর্টের পরিধি বাড়ানোর জন্য সার্বক্ষণিক বিশেষায়িত একটি পুলিশ ফোর্স।
# ফৌজদারি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা।
# জেলা-উপজেলায় ‘রাজস্ব আদায় কমিটি’।
# জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে জানানোর প্রস্তাব।
# দুর্যোগ, বন্যা-সাইক্লোনে কাজ করতে স্পিডবোটের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব।
# ব্যাংক ঋণের শর্ত সহজ করার প্রস্তাব।
# শহরাঞ্চলে অবস্থিত সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কিছু সময়ের জন্য ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানোর প্রস্তাব।