বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরীক্ষার ভুল ফলাফলে আত্মহত্যা করলেন ২৩ শিক্ষার্থী

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

প্রযুক্তিগত ভুলে দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফলে অকৃতকার্য হওয়ায় ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের তেলেঙ্গানা প্রদেশে এ ঘটনা ঘটে।

গত ১৮ এপ্রিল এ ফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে দেখা যায়, এক হাজার একশ সাইত্রিশ জন অকৃতকার্য হন। পরবর্তীতে সংশোধিত ফলে তাদের সবাই কৃতকার্য হন। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী আত্মঘাতি হয়েছেন তাদের ফল প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।

যখন ফলাফল প্রকাশ করা হয় এর পরপরই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। তারা প্রকাশিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। যাদের মধ্যে আত্মহত্যা করেন ২৩ জন।

 

এরপরেই জানা যায়, প্রযুক্তিগত ভুলের কারণেই এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফল অকৃতকার্য এসেছিল। প্রথমবার ফল প্রকাশের পর তা সংশোধনের জন্য শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত একটি সংগঠন হাইকোর্টে আবেদন করে। হাইকোর্ট ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান করে। এরপর ২৭ মে পরীক্ষা বোর্ড সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে।

সংশোধিত ফলাফলে দেখা যায়, ১১৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে আগের ফলাফলে এক শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে শূন্য নাম্বার পেয়েছিল। সংশোধিত ফলাফলে সে ঐ বিষয়ে ৯৯ নাম্বার পায়।

এ ঘটনায় গ্লোবারেনা টেকনোলজি নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষার ফলাফলের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশ করে। তারা ২০১৭ সালে রাজ্যের নয় লাখ সত্তর হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর বার্ষিক ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব নেয়। কোম্পানিটি তাদের ভুল স্বীকার করেছে।

বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে কোম্পানির সিইও ভিএসএন বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করেছি। যে ভুল হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তিগত কারণে ফলাফলে ভুল হয়েছে। পরে আমরা সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করেছি।’

 

আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কে কোম্পানির এক প্রতিনিধি বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফল ভুলের সাথে আত্মহত্যার ঘটনা জড়িত না।’

এদিকে সংশোধিত ফলাফলে আত্মহত্যাকারী ২৩ জন শিক্ষার্থীর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। পরিবারদের দাবি, আত্মহত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য বোর্ড কর্তৃপক্ষ সুপরিকল্পিতভাবে তাদের সংশোধিত ফলাফলে তাদের বাদ দিয়েছে।

আত্মহত্যা করা এক শিক্ষার্থী বাথিনীর বড় ভাই ভেনকাতেশ বলেন, তার ছোট বোন প্রকাশিত ফলাফলে অকৃতকার্য হয়। সে এ ফলাফল মেনে নিতে পারেনি। একদিন সবার অগোচরে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ঘণ্টাখানেক পরে হাসপাতালে মারা যায়।’

ভেনকাতেশ আরো জানান, তার বোন বাথিনী হাসপাতালেও মুমূর্ষ অবস্থায় সবাইকে বলতে থাকে, ‘‘আমি পরীক্ষায় অবশ্যই পাস করবো।’’ এ ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

 

আরেকজন অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে একাদশ শ্রেণিতে গণিত, রসায়ন, পদার্থ বিষয়ে পূর্ণ নম্বর পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলে গণিতে মাত্র এক নাম্বার ও পদার্থ বিষয়ে শূন্য নাম্বার পেয়েছে। এ ফলাফল কীভাবে সম্ভব?

আত্মহত্যা করা আরেকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তাদের হতদরিদ্র পরিবার। তাদের ১৬ বছরের মেয়ে ভোদনালি শিভানি প্রতিদিন সকালে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে উঠত।

সে ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। আর এ জন্য সে তার পরিবারকে আগামী ৫ বছর অপেক্ষা করতেও বলে। কারণে সে ইঞ্জিনিয়ার হলে পরিবারের দারিদ্র্য থাকবে না। কিন্তু দারিদ্র্য ঘোচানোর পরিবর্তে পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে।


সাধারণত যেসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার হতে চায়, তাদেরকে অনেক বেশি মানসিক চাপে থাকতে হয়। কারণ শিক্ষার্থীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা অনেক কম। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। ফলে, দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্যতা অনেকের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব হয় না।

 

ভারতের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ভাসোপ্রাদো কার্তিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক বেশি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।’ মানসিক চাপ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিল করার পরামর্শ দেন।