বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা এই প্রিয়া সাহা কে?
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৪১ এএম, ২০ জুলাই ২০১৯ শনিবার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রিয়া সাহা নামের এক নারীর নালিশে সোশ্যাল মিডিয়া সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশ বিষয়ে এমন বক্তব্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তার বিচার চাইছেন নেটিজেনরা।
তীব্র নিন্দা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কে এই প্রিয়া সাহা?
এই নারী মূলত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বরত।
তার গ্রামের বাড়ী পিরোজপুর জেলার চরবানিরীর মাটিভাঙ্গা নাজিরপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। রোকেয়া হলে থাকতেন। সে সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে ‘শারি’ এনিজিও সংস্থার মাধ্যমে প্রিয়া নিজ এলাকার দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেন।
তার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক। কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয়া সাহার দুই মেয়ে বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে সেখানে যান প্রিয়া সাহা।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতা বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কথা বলেন।
এতে বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রিয়া সাহা উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।
এরপর তিনি বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।
এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতার স্বরূপ এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। এ সময় ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’
ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’
মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রকাশ করে। এর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশিরা নানা ধরণের মন্তব্য করছেন।
ইতিমধ্যে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রিয়া সাহার নালিশকে চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেয়া ওই নারীর অভিযোগ সত্য নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে-অপরকে শ্রদ্ধা করে।
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রিয়া সাহার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেলে হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সঙ্গে কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে ফোন রেখে দেন।
তবে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা তার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এ বিষয়ে তিনিই ভালো ব্যাখা দিতে পারবেন।’
প্রিয়া সাহা কিভাবে হোয়াইট হাউজের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রিয়া সংগঠনের ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজন। তাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সেখানে পাঠানো হয়নি। ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি কিভাবে সাক্ষাত করেছেন তা আমি জানি না।’ প্রিয়া সাহার বেসরকারি সংস্থা সংস্থা ‘শারি’-এর কার্যালয়ের অন্যান্য সদস্যরাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।