মাটি খুঁড়ে ৯ হাজার বছর পুরোনো বসতির খোঁজ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৫১ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৯ সোমবার
মাটি খুঁড়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ৯ হাজার বছর আগের বসতির খোঁজ পেয়েছেন। জেরুজালেমের লাগোয়া প্রস্তরযুগের সেই বসতিতে রীতিমতো আধুনিক নগর পরিকল্পনার ছোঁয়া ও চাষবাসেরও ব্যবস্থা ছিল।
খুঁজতে খুঁজতে মিলেছে তিরের ফলার টুকরো, সে যুগের কোনও নারী তাঁর প্রসাধনে ব্যবহার করতেন এমন কানের দুল-ও। সব মিলিয়ে নিওলিথিক জমানার এক বড় শহরের ছবি এখন প্রত্নতত্ত্ববিদদের সামনে। সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন ইজরায়েলের পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা।
তাঁদের দাবি, ওই বসতিতে অন্তত ৩০০০ বাসিন্দার বসবাস ছিল। জেরুজালেম থেকে তিন মাইল পশ্চিমে, এখন যেখানে ইজরায়েলের মোৎজা শহর, সেখানেই বসতিটি গড়ে উঠেছিল।
খননকার্যের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা জেকব ভার্দি জানিয়েছেন, প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে ওই এলাকার গুরুত্ব অনেকদিন ধরেই স্বীকৃত। তবে এই সাম্প্রতিক আবিষ্কার গোটা দক্ষিণ লেভান্ত অর্থাৎ ইজরায়েল, প্যালেস্তাইন, জর্ডন, দক্ষিণ লেবানন ও দক্ষিণ সিরিয়ার মধ্যে বৃহত্তম এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে । বাকি বসতিগুলির তুলনায় এটি অনেক বড় শহর।
ঠিক কী রকম ছিল নব্য প্রস্তর যুগের ওই বসতি? বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্লাস্টার ব্যবহারে রীতিমতো চমকে দিতে পারতেন সেখানকার বাসিন্দারা। যেভাবে সেখানকার দু'টি বাড়ির মধ্যে রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাতে উন্নত নগর পরিকল্পনার ছাপ-ও স্পষ্ট।
বিভিন্ন জায়গায় গুদামে শস্যদানা মজুত করে রাখা হত যার অর্থ চাষাবাদও চলত সে বসতিতে। তিরের ফলা থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জীবিকা হিসেবে শিকারকেই প্রাধান্য দিতেন বাসিন্দারা। তবে পশুপালন-ও যে হত, সেটা পশুদের হাড়ের অবশিষ্টাংশ থেকে স্পষ্ট।
ভার্দির দলের দাবি, যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির সন্ধান মিলেছে ওই এলাকা থেকে, তা থেকে এটা বোঝাও কষ্টকর নয় অস্ত্র তৈরিতে রীতিমতো দক্ষ ছিলেন সে যুগের মানুষজন। ছুরি, গাছ কাটার অস্ত্র তো বটেই, ছিল প্রসাধনের জন্য ব্যবহৃত গয়না তৈরির মতো সুক্ষ্ম হাতের কাজের পারদর্শিতাও।
তার প্রমাণ স্বরূপ মিলেছে পাথরের ব্রেসলেট, বিভিন্ন ধরনের পাথরের তৈরি পুতুল, ইত্যাদি। তারা যে বর্হির্জগতের সঙ্গে বাণিজ্যসম্পর্কও তৈরি করেছিলেন, সে ব্যাপারেও মোটামুটি নিশ্চিত প্রত্নতত্ত্ববিদের দল। সব মিলিয়ে এই আবিষ্কারকে তাই 'যুগান্তকারী' বলে মনে করছেন তারা।
এর আগে জেরুজালেম থেকে যে সবচেয়ে পুরোনো ধ্বংসাবশেষটির সন্ধান মিলেছিল, সেটি ছিল ৭০০০ বছরের পুরনো। সে দিক থেকে দেখলে এই সাম্প্রতিক আবিষ্কার আরও পুরনো।
ভার্দির কথায়, আগে ধারণা করা হত, জেরুজালেম সংলগ্ন এলাকা ইতিহাসের ওই পর্বে শূন্য ছিল। এ রকমও শোনা যেত যে নিওলিথিক সমাজ তখন ভেঙে পড়ছিল, গ্রামগুলি ছোট হয়ে আসছিল। কিন্তু মোৎজায় আমরা যা পেয়েছি তা ইতিহাসের সব ধারণা পুরো ভেঙে দিতে পারে।
এই আবিষ্কারকে তাই 'গেম চেঞ্জার' বলেই ধরছেন তাঁরা। আপাতত তাই পরের ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। থ্রি-ডি প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো এলাকার তথ্য ধরে রাখার চেষ্টাই এখন মুখ্য যাতে সমস্ত খুঁটিনাটি ডিজিটালি ধরা পড়ে। কে জানে হয়তো তা থেকেই আরও নতুন কোনও রহস্যের খাসমহল খুলে যাবে!