ইরান-যুক্তরাজ্য উত্তেজনায় তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:১২ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার
পারস্য উপসাগরে ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাঙ্কার আটকের ঘটনার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্থীতিশীল হয়ে ওঠেছে। দু’দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রভাবে খুব দ্রুতই তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
থিঙ্ক ট্যাংকগ্রুপ ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ’ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীন তেল বাজারে ইতোমধ্যেই মন্দা চলছে যা আরো ঘনীভূত হতে পারে।
এছাড়া হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেলবাহী আন্তর্জাতিক ট্যাঙ্কার যাতায়াতের নিরাপত্তার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় এর প্রভাব বৈশ্বিক বাজারেও পড়তে পারে। তেলের যোগান বাধাগ্রস্থ হলে গ্রাহক পর্যায়ে বিশ্বব্যাপী পেট্রোলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য ইরানকে ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, আটক করা ব্রিটিশ জাহাজ স্টেনা ইমপেরো যদি ফেরত দেয়া না হয় তাহলে ইরানকে ‘কঠোর’ কূটনৈতিক পরিণতি ভোগ করতে হবে।
গেল মাসে জিব্রাল্টারে ব্রিটিশ সৈন্যদের দ্বারা ইরানের একটি তেলের ট্যাঙ্কার জব্দ করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ পতাকাবাহী তেলের ট্যাঙ্কার স্টেনা ইমপেরো আটক করে।
এর আগে বেশ কয়েকমাস ধরে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের বিরুদ্ধে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আগ্রাসী ব্যবহারের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুলে আসছিল।
ওই সময়ে হরমুজ প্রণালীতে ৬টি তেলের ট্যাঙ্কার আটকের ঘটনায় ইরানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর ফলে ওই অঞ্চলে মার্কিন ও ব্রিটিশ নৌবাহিনীর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ইরান হয়তো তাদের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত হরমুজ প্রণালীই বন্ধ করে দেবে। হরমুজ প্রণালী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এর মাধ্যমে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে জাহাজ চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
যদি তাই হয়, তাহলে পৃথিবীর মোট তেলের মজুদের এক পঞ্চমাংশ এবং মোট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের এক চতুর্থাংশের সঙ্গে বিশ্বের সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যাবে।
অধিকাংশই মনে করেন, এই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। তবে ইরান যদি আসলেই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তাহলে তেলের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের চেম্বার অব শিপিংয়ের প্রধান ডেভিড বেলস্টন।
যুক্তরাজ্যের মোট তেলের পাঁচ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস হরমুজ প্রণালী হয়ে আসে। এ কথা উল্লেখ করে বেলস্টন বলেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে যুক্তরাজ্যে তেল ও গ্যাসের দাম যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
গেল কয়েক সপ্তাহে পারস্য উপসাগরে অস্থিরতার কারণে তেলের দাম সারা বিশ্বেই কিছুটা ওঠানামা করেছে। তবে তেলের দরের এই ওঠানামা খুব একটা বেশি পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আলফা এনার্জি গ্রুপ কনসাল্টেন্সি নামের একটি পরামর্শ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জন হল।
তিনি মনে করেন তেলের বাজারে দামের খুব বেশি পরিবর্তন না আসার একটি কারণ ইরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি। কারণ সেগুলো শেষ পর্যন্ত শুধু হুমকি হিসেবেই থেকে গেছে।
তবে পারস্য উপসাগরে অস্থিরতা বাড়লেও এবছর তেলের দামে খুব একটা পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন জন হল।
যুক্তরাষ্ট্রে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতি হওয়ায় তাদের তেলের চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়া - এরকম কয়েকটি কারণে এবছর বৈশ্বিক বাজারে তেলের মজুদ বেশি, যার ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।