বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অন্ধকার ভেনেজুয়েলা, দেশত্যাগ করেছে ৪০ লাখ মানুষ!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯ বুধবার

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার ২৩টি রাজ্যের অর্ধেকের বেশি এলাকায় সোমবার আবারও ব্ল্যাকআউট বা বিদ্যুৎ-বিপর্যয় ঘটেছে। এ ঘটনায় তড়িৎ চুম্বকীয় (ইলেকট্রোম্যাগনেট) হামলাকে দায়ী করেছে দেশটির সরকার। প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলমান এ বিপর্যয়ে ৪০ লাখ নাগরিক দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনায় ভেনেজুয়েলার জাতীয় পাওয়ার গ্রিড পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় এ বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ঘটছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা।

এর আগে তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলাকে প্রথমবারের মতো দুর্বল করে ফেলে গত ৭ মার্চের ব্ল্যাকআউট। প্রায় সপ্তাহব্যাপী দেশটির বেশ কিছু অংশজুড়ে চলতে থাকে এ সংকট। থেমে থেমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও গত ২৫ মার্চে ঘটে আরেক ব্ল্যাকআউট। এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া পানিসংকট দেশবাসীকে চরম দুর্ভোগের মুখে ফেলে দেয়।

 

মার্চ মাস থেকে চলমান ব্ল্যাকআউটে এই প্রথমবার যুক্ত হলো রাজধানী কারাকাস। এই সিরিজ ব্ল্যাকআউটের জন্য বিরোধী দল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক নেতা নিকোলা মাদুরো। বিদ্যুতের এই দুরবস্থার প্রভাব পড়ছে গোটা দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে। দেশে মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছে। চলতি বছর তা সর্বোচ্চ ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভেনেজুয়েলার তথ্যমন্ত্রী জর্জ রদ্রিগেজ জানিয়েছেন, তড়িৎ চুম্বকীয় হামলার কারণে এ বিপর্যয় ঘটেছে। অবশ্য এ দাবির পেছনে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎসেবা পুনরায় চালু করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বলিভার রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ও গুরি জলবিদ্যুৎ বাঁধে ১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ব্ল্যাকআউট হলে কারাকাস অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। 

‘গুরি হাইড্রোইলেকট্রিক প্ল্যান্ট’ নামে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি পুয়ের্তো অরদাজ শহরে অবস্থিত। গোটা ভেনেজুয়েলার ৫ ভাগের ২ ভাগ বিদ্যুৎ এই প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়। 

 

সম্প্রতি এই এলাকার জলাধারগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে পানির স্তর দুই মিটার নিচে নেমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে টারবাইনের ক্ষতি এড়াতে প্রকল্পের জেনারেটরগুলোও বন্ধ রাখা হচ্ছে। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেমে যাচ্ছে। অন্ধকারে ডুবছে দেশ। 

ভ্যালেন্সিয়া শহরের ৪৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মারিয়া লুইসা রিভারো বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে আবারও বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটছে, ভাবতেই ভয় হচ্ছে। ব্ল্যাকআউটের কথা শুনে দৌড়ে রেফ্রিজারেটরে খাবার ঢুকিয়ে রেখেছি। মার্চ মাসে অনেক খাবার নষ্ট হয়েছে, এবার এমন কিছু ঘটুক, তা চাইনি।’

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির শিখরে থাকা ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি দেশটিতে খাদ্য ও ওষুধের যথাযথ জোগানও দিতে পারছে না। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে দেশটির বড় বিপণিকেন্দ্রগুলো এখন থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুতের এই দুরবস্থার প্রভাব পড়ছে গোটা দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে। এ কারণে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।