মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পৃথিবীকে বাঁচাতে সময় আছে মাত্র দেড় বছর!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

গত বছর জাতিসংঘের বিজ্ঞানীদের ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) জানিয়েছিল, পৃথিবীকে বাঁচাতে আর সময় আছে মাত্র ১২ বছর। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে আগামী দেড় বছরের মধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।

বিজ্ঞানীদের ওই টিমের বক্তব্যে আরো বলা হয়েছিল, যদি এই শতকের মধ্যে আমরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে চাই, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নির্গমন কমাতে এতটা সময় পাওয়া যাবে না। কার্বন নির্গমন কমাতে ২০২০ সালের আগেই সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে পৃথিবীকে বাঁচাতে ২০২০ সালকে শেষ সময়সীমা বলে ২০১৭ সালে বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী প্রথম ঘোষণা করেছিলেন।

জলবায়ু বিজ্ঞানী এবং পটসড্যাম ক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের হ্যান্স জোয়াকিম শেলনহুবার বলেন, জলবায়ু বিষয়ক অঙ্কটা বেশ নির্মমভাবেই স্পষ্ট এখন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো পৃথিবীর ক্ষত সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়, কিন্তু আমাদের অবহেলার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে আমরা পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারি।

 

পৃথিবীকে বাঁচাতে ২০২০ সালই শেষ সময় হিসেবে উল্লেখ করে ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লস সম্প্রতি কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে বলেন, আমার দৃঢ় মত হচ্ছে, আগামী ১৮ মাসেই নির্ধারিত হবে আমরা জলবায়ুর পরিবর্তনকে আমাদের টিকে থাকার মাত্রায় আটকে রাখতে পারব কি না। আমাদের টিকে থাকার জন্য প্রকৃতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারবো কি না।

কেন এই ১৮ মাস এত গুরুত্বপূর্ণ:

এই সময়টা এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ আগামী দেড় বছরে জাতিসংঘের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আছে। প্যারিসে ২০১৫ সালে যে জলবায়ু চুক্তি হয়েছিল, তার পক্ষে বিপক্ষে বহু তর্ক বিতর্ক হয়েছে এই চুক্তির 'রুলবুক' তৈরি করতে। এই চুক্তির মাধ্যমে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল যে তারা ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনবে। এছাড়াও আইপিসিসির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কার্বন নির্গমন বাড়ার হার ২০২০ সালেই থামিয়ে দিতে হবে, যাতে তাপমাত্রা এই শতকে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি আর না বাড়ে। তবে কোনো পদক্ষেপই এই পরিমাণ কমাতে পারেনি। এমনকি চলতি শতকের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা হয়তো তিন ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

 

 

এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে, প্রত্যেক দেশেরই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো সাধারণত পাঁচ বা দশ বছর মেয়াদি। কাজেই ২০৩০ সাল নাগাদ যদি কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হয় তাহলে ২০২০ সালের মধ্যেই সেই পরিকল্পনার নকশা সম্পূর্ণ করতে হবে। 

পৃথিবীকে বাঁচাতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে:

জাতিসংঘের বিশেষ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর। এই সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস। তিনি বলেছেন, কোনো দেশ যদি তাদের কার্বন নির্গমনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর প্রস্তাব করতে পারে, তবেই যেন তারা এই সম্মেলনে আসে।

এরপর এই পদক্ষেপ আরো এগিয়ে নিতে এ বছরের শেষ নাগাদ চিলির সান্টিয়াগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বলে একটি সম্মেলন হবে। এরপর ফাইনাল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ব্রিটেনে হতে যাওয়া ২০২০ সালের সম্মেলনে।

আশাবাদী হওয়ার কারণ:

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই এই সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবছেন। কারণ ইউরোপসহ সারা বিশ্বে তাপপ্রবাহ যে বাড়ছে তার অনেক প্রমাণ এখনই পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে হওয়া আন্দলনকে আরো বেশি বেগ এনে দিয়েছে সুইডেনের স্কুলছাত্রী গ্রেটা থানবার্গ। অন্যদিকে পরিবেশবাদী গোষ্ঠী 'এক্সটিংশন রেবেলিয়ন' এর আন্দোলনও জনমতকে প্রভাবিত করেছে। 

এই বিষয়ে অনেক দেশের রাজনীতিকরাও যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিবে বলে জানিয়েছে। ব্রিটেন ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা করেছে।