চুরি যাওয়া নবজাতককে সন্তান দাবি করলেন চোর, বিপাকে পুলিশ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার
হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরিকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ভারতের বকুলতলা থানার নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে। তিন ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি তৎপরতায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হলেও আইনি জটিলতায় তাকে মায়ের কাছে পৌঁছাতে গড়িয়ে যায় রাত।
গত বুধবার সকালে প্রসব বেদনা ওঠায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সরবানু লস্করকে নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বামী কুলতলির নলগোরা অঞ্চলের ৮ নম্বর সোনাটিকারি গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন লস্কর।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীকে ভর্তি করে নেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সরবানু লস্কর এক মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। এরপর লেবার রুম থেকে সরবানু ও তার নবজাতককে হাসপাতালের বিছানায় স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসক এবং নার্সরা সময় মতো এসে সরবানু ও তার নবজাতকের দেখভালও করেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিকেল ৫টা নাগাদ এক নারী নিজেকে ওই হাসপাতালের নার্সের পরিচয় দিয়ে ইনজেকশন দিতে হবে বলে জানিয়ে সরবানুর কোল থেকে তার বাচ্চাকে নিয়ে যান। এরপর দীর্ঘক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও কোলের সন্তানকে ফেরত না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সরবানু। কান্নাকাটি শুরু করে দেন তিনি। খবর পেয়ে বাইরে অপেক্ষারত সরবানুর পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান তারা। শুরু হয় খোঁজখবর।
উদ্বেগ ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। হাসপাতালের বাইরে জয়নগর কুলতলি যাওয়ার রাস্তাতেও খোঁজখবর শুরু হয়। এক অটোচালক জানায়, কিছুক্ষণ আগেই শিশু কোলে এক নারীকে জয়নগরে নামিয়ে এসেছেন তিনি।
এ কথা জানতে পেরে ওই অটো চালককে নিয়ে জয়নগরে যেখানে ওই নারীকে নামানো হয়েছিল সেখানে যায় পুলিশ। সেখানে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ওই নবজাতককে।
ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় তার পরই। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী দাবি করেন, শিশুটি তারই। ওই নারীর স্বামীও দাবি করতে থাকেন, বুধবার সকালে তিনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে যান। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্ত্রীকে একটি ইঞ্জেকশন দেন এবং স্থানীয় কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। এরপর তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সেখানেই তার স্ত্রী এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন। জোর গলায় তারা দাবি করেন, ওই শিশুটি তাদেরই।
বিপাকে পড়ে যায় বকুলতলা এবং জয়নগর থানার পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ওই নারীকে আটক করে এবং সদ্যোজাত শিশুটিকে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
এদিকে ততক্ষণে নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালের সামনে আলাউদ্দিন লস্করের আত্মীয়-স্বজনরা বাচ্চা ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে দেন।
এরপর জয়নগর থেকে আটক হওয়া নারী সত্যিই অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কিনা বা সদ্যোজাত শিশুটি তার কিনা, সেটা জানার জন্য রাতেই তাকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসকরা জানান, ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা। তখনই বোঝা যায়, কোনোভাবেই শিশুটি তার হওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ নিশ্চিত হওয়ার পর উদ্ধার হওয়া শিশুকে রাতেই নিমপীঠ শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু জয়নগরের ওই নারী কী কারণে নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করে নিয়ে এলেন এবং কেনইবা তিনি ও তার স্বামী মিথ্যা দাবি করলেন, তা এখনো পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। তদন্ত শুরু করেছে বকুলতলা থানার পুলিশ।