আসাম থেকে ৩০ জন বাংলাদেশীকে বহিষ্কার
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:১১ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে ৩০ জন বাংলাদেশীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ৩০ জন বাংলাদেশী নাগরিককে সীমান্তের ওপারে জকিগঞ্জে বিজিবি’র হাতে তুলে দেয়। বহিষ্কৃত এই ব্যক্তিরা গেল বেশ কয়েকমাস ধরে আসামের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন।
আসাম পুলিশ সূত্রে বিবিসিকে জানানো হয়, 'ডিপোর্ট' বা বহিষ্কার করা এই ৩০ জনের সবাই অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছিলেন।
আর সেই অপরাধে জেল খাটার পর বাংলাদেশে তাদের ঠিকানা ও পরিচয় যাচাই করেই এদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশের জকিগঞ্জ সার্কেলের পুলিশ কর্মকর্তারাও এই ডিপোর্টেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে আসামের কিছু রাজনীতিবিদ বলছেন, ২০-৩০ জন বাংলাদেশীকে ডিপোর্ট করা গেলেও লাখ লাখ কথিত বিদেশি নাগরিককে কখনওই সে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
গেল মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আসামের সুতারকান্দি সীমান্ত চেকপোস্ট পেরিয়ে ২১জন বাংলাদেশী নাগরিককে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
তার আড়াই মাসের মধ্যে এদিন করিমগঞ্জ থেকে আবার ৩০জন বাংলাদেশীকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হলো, যাদের মধ্যে ২৬জন মুসলিম ও চারজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এরা সবাই আসামের শিলচর, কোকরাঝাড়, গোয়ালপাড়া, তেজপুর বা জোড়হাটের বিভিন্ন বিদেশি ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন।
অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার দায়ে পাসপোর্ট আইনে তাদের ন্যূনতম ছমাসের মেয়াদে জেলও খাটতে হয়েছে।
তারপর বাংলাদেশ উপদূতাবাসের মাধ্যমে সে দেশে তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করেই আজ এই ডিপোর্টেশন সম্পাদিত হয়, বিবিসিকে জানিয়েছেন করিমগঞ্জ জেলার পুলিশ প্রধান মানবেন্দ্র দেবরায়।
দেবরায়ের বলেন, "বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা নাগাদ করিমগঞ্জে পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের (পিসিআইপি) মাধ্যমে এই বিদেশি নাগরিকদের আমরা সীমান্তের ওপারে জকিগঞ্জ বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিজিবি’র হাতে তুলে দিয়েছি।"
"এরা কেউ দুবছর, কেউ বা হয়তো তিন বছর আগে বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছিলেন।"
"পাসপোর্ট আইনে কমপক্ষে ছ'মাস জেল খাটার পরও নানা কারণে তাদের ডিপোর্টেশনের প্রক্রিয়াটা আটকে ছিল।"
করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, "আমরা যেটা করি, যখনই আমরা অবৈধ বাংলাদেশীদের ধরতে পারি এবং জেরার মুখে তারা স্বীকার করে যে তাদের আসল বাড়ি ধরা যাক মৌলভীবাজারের অমুক গ্রামে, তখনই আমরা স্থানীয় বাংলাদেশ মিশন ও বিজিবি’কে সেই তথ্যটা জানাই।"
"তারপর বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধাণ করে যখন আমাদের জানান যে হ্যা, ওই লোক আমাদেরই লোক তখন আমরা তাদের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করি।"
এদিকে বাংলাদেশে সিলেট ডিভিশনে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হাবিবুর রহমান হাওলাদারও বিবিসির কাছে এই তিরিশজন নাগরিককে হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই মানুষগুলোকে এখন নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
সিটিজেনস রাইটস প্রোটেকশন কমিটি (আসাম) নামে একটি সংগঠন ওই রাজ্য থেকে অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর আন্দোলনে যুক্ত।
তারাও বলছে রাজধানীতে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের একটি উপদূতাবাস চালু হওয়ার পর থেকেই কথিত বাংলাদেশীদের পরিচয় যাচাইয়ের কাজে অনেক গতি এসেছে।
সংগঠনের মহাসচিব সাধন পুরকায়স্থ জানাচ্ছেন, "এই অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশন চালু হওয়ার পর থেকে এযাবত ১২৪জন বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো গেছে।"
তবে আসামে আসন্ন এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জী থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে, সেই লাখ লাখ লোককে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো কিছুতেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিরোধীদল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও শিলচরের সাবেক এমপি সুস্মিতা দেব।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "প্রথম কথা হলো, এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা এখনও বেরোয়নি। কাজেই আজকের এই ডিপোর্টেশনের সঙ্গে এনআরসি-র সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই।"
"আর বাংলাদেশ তো বলেইছে, তারা যদি তদন্ত করে দেখতে পায় অমুক লোকটা তাদের দেশের কোনও গ্রামের, তাহলে তারা তাকে ফেরত নিতে রাজি আছে।"
"কিন্তু এটা বিশজন, পঞ্চাশজন কি একশোজনের ক্ষেত্রে হয়তো ঠিক আছে।"
"সংখ্যাটা যদি দশ, বিশ বা তিরিশ লাখ হয় তাহলে কি ভেবেছেন বাংলাদেশ তাদের আদৌ ফেরত নেবে? কিছুতেই নয়!"
মিয়ানমার যেভাবে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নিতে গড়িমসি করছে, সেভাবেই বাংলাদেশও এই বিপুল পরিমাণ লোককে নিতে কিছুতেই রাজি হবে না বলে মিস দেবের দৃঢ় বিশ্বাস।
তিনি আরও জানাচ্ছেন, "তথ্য জানার অধিকারে সরকারকে প্রশ্ন করলে বা পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তরেই আপনি দেখতে পাবেন, গেল পাঁচ বছর ধরে কিন্তু বছরে ১৫-২০ জনের বেশি লোককে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা সম্ভব হয়নি।"
"আর যে লোকটা ধরা যাক ১৯৮৫ সালে অবৈধভাবে আসামে ঢুকে এখানেই ঘরসংসার করছে, সিলেটে যার কিছুই আর নেই, তাকে আপনি ফেরত পাঠাবেনই বা কীভাবে?"
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য একাধিকবার বলছেন, এনআরসিতে যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশেই ডিপোর্ট করা হবে।
বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাম মাধবও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, এনআরসি তালিকাভুক্ত না-হলে তাদের আর কোথাও নয়, বাংলাদেশেই ফেরত পাঠানো হবে।
করিমগঞ্জ সীমান্তের এইসব ছোটখাটো ডিপোর্টশনে তাদের সেই হুঁশিয়ারি কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য শোনাতে পারে, এই যা।