৪১ বছর ধরে দুর্ঘটনায় আহতদের ফ্রি হাসপাতালে নেন তিনি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:৩০ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৯ শনিবার
টানা ৪১ বছর ধরে দুর্ঘটনায় আহত মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন ৭৬ বছর বয়সী এক অটো চালক। তিনি দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিচ্ছেন নিজের অটো দিয়ে। শুধু তাই নয়, তার এলাকার ডায়বেটিস রোগীদের ওষুধ দেন বিনামূল্যে।
৭৬ বছর বয়সী ভারতীয় অটো চালক হরজিন্দার সিং। ১৯৬৪ সাল থেকে আছেন এ পেশায়। খুব অল্প বয়স থেকেই যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাদের সহযোগিতা করে আসছেন সাধ্যমতো। আর এটা করছেন কোনও দ্বিধা ছাড়াই।
এক সময় ট্রাফিক প্রহরী হিসেবে কাজ করা সিং প্রায় সময়ই সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষের মুখোমুখি হতেন। তিনি সবসময় আহতদের সাহায্য করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু আহতদের ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করা কখনোই তার পক্ষে ভালোভাবে সম্ভব হত না।
দ্য লজিক্যল ইন্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাজিন্দার সিং বলেন, আমি অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি, যেখানে আশে পাশের লোকেরা তাদের সাহায্য করার পরিবর্তে তাদের দুর্ঘটনার ছবি তোলাতেই ব্যস্ত থাকেন।
যখন একটি মানুষের বিপদের মুহূর্তে আপনি তার পাশে গিয়ে সাহায্যের জন্য দাঁড়াতে না পারেন তবে আপনার একজন মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়ার উদ্দেশ্য কী? আমি যখন একটি অটো কিনলাম, তখন উপলব্ধি করলাম এখন মানুষকে সাহায্য করার কিছুটা সামর্থ্য হয়েছে।
সিংয়ের অটোটি অন্য সাধারণ অটোর মতই দেখতে। কিন্তু যদি একটু গভীরভাবে খেয়াল করা হয় তখন দেখা যায়, পিছনে গাড় লাল রঙ দিয়ে লেখা ইংরেজি সাতটা শব্দ ‘রাস্তায় দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা’।
১৯৭৮ সাল থেকে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষদের সেবা করা শুরু করেছেন সিং। শুরুর পর আর পিছনে ফিরে তাকাননি। তিনি বলেন, যখনই কোনও দুর্ঘটনায় আহত মানুষ আমার নজরে আসে, তখনই আমি তাদের কাছের কোনও হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
সিং তার অটোতে সবসময়য়ই একটি ওষুধের বাক্স রাখেন যেন হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে কারও যদি জরুরি প্রয়োজন হয় তখন তাকে অপেক্ষা করতে না হয়।
সিং বলেন, আমি এলাকায় ডায়বেটিক রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করি। তাদের মাঝে অনেকের কাছেই আমার ফোন নম্বর আছে এবং আমি তাদের সবাইকে বলেছি যখন ওষুধের প্রয়োজন হবে তখন তারা আমাকে ফোন দিতে পারে। এমনকি আমি ব্যস্ত থাকলে আমার ছেলে ওষুধ পৌঁছে দেয়, যাতে করে কাউকেই অপেক্ষায় থাকতে না হয়।
তিনি আরো বলেন, আমি যাদের সাহায্য করি তাদের ভালোবাসাই এই কাজগুলো করে যেতে সাহায্য করছে। আমি চিরকাল বেঁচে থাকব না, কিন্তু আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন যাদের আমার সাহায্যের প্রয়োজন তা দিয়ে যাব।
যদি আমরা মানুষেরা একে অন্যের পাশে না থাকি, আমরা যদি শুধু নিজের জন্যই বাঁচি তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী? আমি যখনই কাউকে সাহায্য করি, তারা আমার পরিবারের অংশ হয়ে যায়।
আমি চাই যেনও প্রতিটা মানুষ একে ওপরের প্রতি দয়াশীল হয় এবং সবাই সবাইকে ভালোবাসে। এভাবেই আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে পারি । দিল্লি ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সিং ইতোমধ্যেই অনেকগুলো প্রশংসাপত্র অর্জন করেছেন।