বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও করেন জুতা পালিশ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৪৯ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও পেটের দায়ে মুচির কাজ করে যাচ্ছেন সুভাষচন্দ্র দাস নামে এক যুবক। ট্রেনে কামরায় কামরায় যাত্রীদের জুতা পালিশ করে বেড়াতেন তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার একটি গ্রামের এ তরুণের করুণ বাস্তবতার জীবন তুলে এনেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেও বেকার এ যুবক এখন ফুটপাতে জুতা পালিশ করেন।
উচ্চশিক্ষিত যুবকটিকে এলাকায় সবাই তাকে চেনেন। ফলে কিছু শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে আয় করেন বাড়তি কিছু টাকা।
সুভাষের ভাষ্য, “রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে এমএ করেছি। বহু চেষ্টা করেও সরকারি চাকরি পাইনি। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে।’’
বাড়িতে অসুস্থ মা, ভাই, দুই বোন। সবার ভরণপোষণের দায়িত্ব সুভাষেরই। সংসার চালাতে জুতো পালিশ করতেও আপত্তি নেই তার। সেটিই করছেন তিনি।
যোগেশগঞ্জ বাজারে ফুটপাতের ধারে জুতা পালিশের সরঞ্জাম নিয়ে বসেন দিনে দুইবেলা। এর ফাঁকে পড়িয়ে আসেন কিছু ছাত্র।
সুভাষ জানান, পরিবারে কোনো দিনই সচ্ছলতা ছিল না। কলেজে পড়ার সময়ে বারাসতে এক পরিচিতের বাড়িতে থাকতেন। তখনো নিজের খরচ চালাতে প্ল্যাটফর্মে বা ট্রেনে জুতো সেলাই, পালিশের কাজ করতেন।
কিন্তু যে বাড়িতে থাকতেন, সে বাড়ির মালিকের চোখে পড়ে যায় ঘটনাটা। তখন তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, জুতা পালিশ করলে তার বাড়িতে জায়গা হবে না।
পরবর্তীতে স্থানীয় এক মুদি দোকানদার তাকে নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। সেখানে থেকে ছাত্র পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন সুভাষ।
তার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সাহা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ছেলেটা মেধাবী। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়েছে। এখনো যে ভাবে সংসার চালাচ্ছে, তাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারা যায় না।’’
স্থানীয় এমপি দেবেশ মণ্ডলের কথায়, ‘‘উচ্চশিক্ষিত যুবককে জুতো পালিশ করতে দেখলে খারাপ তো লাগেই। ও যাতে একটা সরকারি চাকরি পায়, সেই চেষ্টা করছি।’’
একইভাবে সুভাষ নিজেও বলেন বলেন, ‘‘যে কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারছি, তাকে কোনো ভাবেই ছোট বলতে পারি না। তবে হ্যাঁ, সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখাটা এখনো ছাড়তে পারিনি!’’