জন্মদিন মানেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি: ববিতা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:১৪ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার
ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ফরিদা আখতার পপি নামের এক কিশোরীর। চলচ্চিত্রে যার নাম রাখা হয় ববিতা। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সর্বপ্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। যার ফলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ববিতা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। নায়িকা হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্য লক্ষণীয় ছিল। অভিনয়, গ্ল্যামার, স্ক্রিন পার্সোনালিটি, নৃত্য কুশলতা- সব কিছুতেই তিনি সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। আজ এই কিংবদন্তী অভিনেত্রীর জন্মদিন।
এবারের জন্মদিন নিয়ে ববিতার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। এ অভিনেত্রী বলেন, একজন মুসলমান হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি। আমাদের যেমন জন্ম আছে, ঠিক তেমনি আছে মৃত্যু। একটি নির্ধারিত সময়েই মহান আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে মৃত্যু রেখেছেন। তাই জন্মদিন আসা মানেই হলো আরো একধাপ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বয়স কমেই যাচ্ছে। এই দিনকে ঘিরে অনেক বেশি আনন্দ ফূর্তি করার আসলে তেমন কিছু নেই। তার মানে আমি এটাও বলছি না যে, সেলিব্রেট করা যাবে না। করা যাবে, তবে তা যেন সীমাবদ্ধতার মধ্যেই হয়।
একমাত্র ছেলে অনিক কানাডা থাকেন। জন্মদিনের শুভ প্রহর শুরু হয় তার একমাত্র ছেলে অনিকের সঙ্গে কথা বলে। ববিতা বলেন, অনিক বলে, ইউ আর দ্য বেস্ট মাদার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। সত্যি বলতে কী সব সন্তানের কাছেই তার মা পৃথিবীর সেরা মা। আমি বুঝি অনিক আমাকে কতটা ভালোবাসে, অনুভব করে, শ্রদ্ধা করে।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ববিতা অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো সংগঠন ‘ডিসট্রেস চিলড্রেন ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল’-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন। গেল ঈদের পরপরই তিনি তার দুই বোন সূচন্দা ও চম্পাকে সঙ্গে নিয়ে সেইসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে বিশেষ ঈদ উদযাপন করেছেন। আপাতত নিজের ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই গুণী অভিনেত্রী।
ববিতার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ষাটের দশকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে। এ সিনেমায় রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। যদিও সিনেমাটি মুক্তির মুখ দেখেনি। উপমহাদেশের প্রখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অভিনয় করে ববিতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা কুড়ান।
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশে-বিদেশে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। টানা তিন বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে রেকর্ড করেন তিনি। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় তাকে।
ববিতা একে একে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্যবসা সফল সিনেমা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে ‘অশনি সংকেত’, ‘নিশান’, ‘মন্টু আমার নাম’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘মায়ের জন্য পাগল’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘স্বরলিপি’, ‘তিনকন্যা’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘মিস লঙ্কা’, ‘জীবন সংসার’, ‘লাইলি মজনু’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি, ইত্যাদি।