মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনা দোষে ২৩ বছর কারাগারে নির্দোষ ৪ কাশ্মীরি

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:৪৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৯ বুধবার

বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় ১৯৯৬ সালের গ্রেফতার হয়েছিলেন ৪ কাশ্মীরিসহ পাঁচ মুসলিম। ২৩ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ভারতের রাজস্থানের উচ্চ আদালত তাদের মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু বিনা অপরাধে তাদের জীবন থেকে চলে গেলো ২৩টি বছর। 

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জয়পুর-আগ্রা হাইওয়েতে এবং দিল্লিতে পৃথক দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৯৯৬ সালে কাশ্মীরের আব্দুল গনি, আলি ভাট, লতিফ আহমেদ ও নিগার বাগসহ আগ্রার একজনকে গ্রেফতার করে। তারা জেল খাটেন দীর্ঘ ২৩ বছর।

২৩ বছরের কারাজীবনে তাদের জীবনের অনেক হিসেব-নিকেষই পাল্টে গেছে। যৌবনকাল হারিয়ে তারা এখন বার্ধক্যে। শরীরে বেঁধেছে নানান রোগ। এ ঘটনায় আরো অনেক মুসলিমই সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার হন। বিস্ফোরণ ঘটনার মূল আসামি আব্দুল হামিদের ফাঁসির রায়ের সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত হন পাপ্পু ওরফে সালিম। যা আদালত বহাল রেখেছে।

 

রাজস্থানের হাইকোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া সেই পাঁচ সদস্য জেল থেকে বেরিয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান। তাদের মধ্যে আব্দুল গনি ও আলি তুলে ধরেন তাদের কষ্টের কথা।

আব্দুল গনি বলেন, দ্বীন প্রচারের ‘আল্লাহওয়ালা’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। যারা শুধু ধর্ম প্রচারে কাজ করতো। দিল্লি একটি মসজিদে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। সেখান থেকে বিশাখাপত্তম। 
বিশাখাপত্তম ৪০ দিন দ্বীনের প্রচার কাজে সময় দিয়ে দিল্লি ফেরার পথে ট্রেন থেকে আমাদের আটক করা হয়। কাশ্মীরে বাড়ি ও মুসলিম পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা আমাদের গ্রেফতার করে।

আব্দুল গনি আরো জানান, গ্রেফতারের পরদিন আহমেদাবাদের পুলিশ স্টেশনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা বুঝতে পারে যে, আমরা নির্দোষ। তরুণ এক পুলিশ অফিসার আমাদের ছেড়ে দেয়ার কথা বলে। 

কিন্তু পুলিশ স্টেশনের ডেপুটি পুলিশ সুপার আমাদের আরো একদিন রেখে দিতে বলেন। সেই একদিন শেষ হতে হারিয়ে গেছে জীবনের ২৩টি বছর।

 

আলি জানায়, সে সময় দিল্লিতেও একটি বিস্ফোরণ ঘটে। সে ঘটনায় একজন কাশ্মীরিকে খুঁজছিল পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে আমরা বার বার বলেছিল যে, আমরা নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ আমাদের সে কথায় কান দেয়নি।

আলি আরও বলেন, আমার মনে বার বার প্রশ্ন এসেছিল, শুধুই কি কাশ্মীরি হওয়ার কারণেই এ গ্রেফতার ও অত্যাচার। আমাদের কথার কেউ গুরুত্ব দেয় না। ভারতের বিভিন্ন কারাগারে স্থানান্তর করতে লাগলো আমাদের। বেঁচে থাকার সব ইচ্ছেই ছেড়ে দিয়েছিলাম।

সে আরও জানায়, ২৩ বছর আগে যখন গ্রেফতার হই, তখন আমি ১৯ বছরের যুবক। এতো বছর পর আমার গোটা পৃথিবীটাই বদলে গেছে। আমার বেঁচে থাকাই এখন নিরর্থক। জীবনের মূল্যবান সময় ও বাবা-মা কাউকেই পেলাম না।