‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ৪৮ বছর
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বিশ্ব রক সংগীতের সঙ্গে যে শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর নাম জড়িয়ে আছে তা নয়, জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও। তা বেশ ভালোভাবেই। সত্তরের দশকে রক সংগীতের জগতে ঘটে যায় এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ এবং বিটলস ব্যান্ডের অন্যতম এক সদস্যের নাম। হ্যাঁ, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ ও জর্জ হ্যারিসনের কথাই বলা হচ্ছে এখানে।
১৯৭১ সালের ১ আগষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অবিস্মরণীয় সংগীতসন্ধ্যাটি। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্বখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর। বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যার্থে কিছু করার জন্য তিনি প্রথম যোগাযোগ করেন জনপ্রিয় বিটলসের অন্যতম সদস্য জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে। হ্যারিসন এগিয়ে আসেন এবং উদ্যোগী হয়ে অন্য শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ৪০ হাজার শ্রোতা-দর্শক এই অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন। দেখতে দেখতে ৪৮ বছর হয়ে গেল এই কনসার্টের।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতে মুক্ত স্বদেশের জন্য ত্যাগ আর সংগ্রামের এক ইতিহাস রচনা করেছিল এদেশের মানুষ। এসময় তাদের পাশে এসে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বের বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, বিজ্ঞানী সহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা ব্যক্তিত্ব। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ ছিল ভালোবাসার এমনই এক অমূল্য নিদর্শন।
ভারতের খ্যাতিমান সেতারবাদক পণ্ডিত রবি শঙ্কর এবং জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিখ ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, রিঙ্গো স্টার প্রমুখ খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী অংশ নিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানে। উত্তাল আবেগময় সেই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের লোকসংগীতের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ ধুন’ নামে সেতারে রবি শঙ্করের এক নতুন সুর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। তার সঙ্গে সরোদ বাজিয়েছেন ওস্তাদ আলী আকবর খান এবং তবলায় ছিলেন ওস্তাদ আল্লা রাখা খান। ‘বাংলাদেশ ধুন’ দর্শক-শ্রোতাদের আবেগে আপ্লুত করে তোলে।
‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর পোস্টার
এরপর মার্কিন প্রতিবাদী গানের রাজা বব ডিলানের ছ’টি গান দারুণ উদ্বেলিত দর্শকদের অনুভূতিতে নাড়া দেয়। এই অনুষ্ঠানেই জর্জ হ্যারিসন পরিবেশন করেছিলেন বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা তার ঐতিহাসিক গান ‘রিলিজ দ্য পিপ্ল অব বাংলাদেশ’। এই গানটির মধ্য দিয়ে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় আবেগে অভিভূত করে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। ১২ আগস্ট কনসার্ট থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ইউনিসেফের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যা দিয়ে পরবর্তীতে বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এই কনসার্ট থেকে যে শুধু অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে তা নয়, বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা রেখেছে এটি। আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমগুলোতে যেখানে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিবেদন হচ্ছিল, সেখানে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই কনসার্ট। রবিশংকর এ কনসার্ট সম্পর্কে বলেন, ‘এক দিনেই সকলে বাংলাদেশের নাম জেনে যায়। এটা ছিল অলৌকিক।’
দাতব্য কনসার্টের ধারণাটি এখন সকলের কাছেই বেশ পরিচিত। বিশেষ করে রক ধারায় এ ধরনের কনসার্ট প্রায়ই হয়ে থাকে। কিন্তু সত্তরের দশকে এটাই ছিল প্রথম। সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এ কারণগুলো প্রচলিত হয়ে গেলেও ওই সময়ে এটা ছিল অনন্য, অনেক সাহসের ব্যাপার। তারা ছিল পথিকৃৎ।’ শুধু দাতব্য কনসার্টের ধারণাটি নয়, কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ছিল প্রথম কোনো বড় কনসার্ট, যেখানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও রক সংগীত একই মঞ্চে পরিবেশিত হয়।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ লাইভ রেকর্ড করা হয়েছিল যা ভিডিও এবং অডিও অ্যালবাম আকারে পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালেই প্রকাশিত হয় এই অনুষ্ঠানের গানের একটি সংকলন। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠানটির সরাসরি ধারণকৃত অংশ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র ডিভিডি আকারে প্রকাশিত হয়।