দেশি পশুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৫৭ এএম, ২ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার
আর মাত্র কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। পছন্দের পশু কোরবানির জন্য মানুষ যেমন প্রস্ততি নিচ্ছে তেমনি প্রস্তুত হচ্ছে পশুর হাটও। গত কয়েক বছরের মতো এবারো দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। শুধু তাই নয়, কোরবানির পরও অন্তত ৮ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক জানান, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ১৮ লাখ। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ। ধরণা করা হচ্ছে এবার সর্বোচ্চ ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। অর্থাৎ কোরবানি শেষেও ৮ লাখের মতো পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু রয়েছে। এ বছর ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। গত বছর ঈদে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মোট সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ এবং কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখের মতো।
এদিকে, দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ অনেক কমে এসেছে। যেখানে ৩-৪ বছর আগেও প্রতিবছর ২৪ থেকে ২৫ লাখ ভারতীয় গরু আসত। সেখানে গত বছর মাত্র ৯২ হাজার গরু ঢুকেছে। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে গবাদিপশুর মোট খামারের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদে ঢাকাসহ দেশের বড় হাটবাজারে পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পশু চিকিৎসকদের দল প্রস্তুত থাকবে। ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় মোট ২৪টি স্থায়ী-অস্থায়ী কোরবানির হাটে দুটি করে দল কাজ করবে। এবার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ১৪টি এবং উত্তরের অধীনে মোট ১০টি হাটবাজার বসবে।
এদিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। রাজধানীর বড় এই হাটে ছোট-বড়, দেশি ও আমদানি করা গরু, মহিষ, উট, ছাগল ও ভেড়া উঠানো হয় সারাবছর। তবে কোরবানি উপলক্ষে হাটে পশু আমদানি এবং বিক্রির চাপ থাকে বেশি।
গাবতলী হাটের আয়তন অনুযায়ী ৬০ থেকে ৭০ হাজার পশু উঠানো সম্ভব হলেও ঈদের সময় এক থেকে দেড় লাখ পশু হাটে উঠানো হয়। এবছর গাবতলী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে ৮ থেকে ৯টি হাসিল ঘর বসানো হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য র্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ ছাড়াও হাট কর্তৃপক্ষের এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন বলে জানা গেছে।
গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের পাশে মূল গেট বানানোর কাজ চলছে। এছাড়া হাটের ভেতরে গরু বাঁধার জন্য বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে শেড তৈরি করা হচ্ছে। মূল হাট ছাড়াও বর্ধিতাংশে খুঁটি দিয়ে গরু রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ইজারা সূত্রে এ বছর গাবতলী হাট মালিক মো. লুৎফর রহমান। হাসিল ঘরের ম্যানেজার ও হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আলমগীর ও হাটের অভিযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা রাকিব হাসান জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ঈদের তিনদিন আগে থেকে আমাদের ঈদের হাট শুরু হবে। তবে যেহেতু এটা স্থায়ী হাট তাই সব সময়ই পশু কেনা-বেচা হয়। হাটে পশু ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো হাট সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। তাই কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।
হাসিল মূল্য সরকার নির্ধারিত সাড়ে তিন টাকার সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে আরো দেড় টাকা যুক্ত হবে। অর্থাৎ প্রতি হাজারে হাসিল মূল্য রাখা হবে ৫০ টাকা।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ৮ আগস্ট থেকে ঈদের হাট বসার কথা থাকলেও মূলত আগামী ৫ আগস্ট থেকেই পশু কেনা-বেচা শুরু হবে। গাবতলী হাটের পাশাপাশি রাজধানীর ভেতর বিভিন্ন অস্থায়ী হাটেও পশু উঠতে শুরু করবে।
এই হাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. হালিম বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা মিলে গতবছর ১১টি ওয়াচ টাওয়ার ছিল। এবছরও এর সংখ্যা এমনই হবে। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো হাটের সার্বিক নিরাপত্তা দেখভাল করা হবে। এছাড়া প্রতিটি রাস্তায় স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন পশু হাটে আনা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সহযোগিতা করতে। আর ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে জাল টাকা সনাক্তা করতে বেশ কয়েকটি বুথ রাখা হবে। বিক্রেতাদের কেউ সন্দেহ পোষণ করলে এসব বুথ থেকে টাকা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান জানান, দেশে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশুর যোগান রয়েছে। সরকারের এই তথ্যের সঙ্গে আমরা একমত। তবে প্রতিবছরই যেটা হয় কোনো কোনো স্থানে পশুর পর্যাপ্ত যোগান থাকে, আবার কোথাও সংকট দেখা দেয়। গতবছর ঢাকায় অনেক বেশি গরু উঠেছিল। ফলে ব্যাপারীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এর আগের বছর ঢাকায় গরুর সংকট দেখা দিয়েছিল। কারণ রাস্তায় তীব্র যানজট ছিল। ঢাকা পর্যন্ত গরু নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। আবার কোনো কোনো হাটে ব্যাপারীদের আটকে জোর করে গরু ঢোকানো হয়। সরকার এসব বিষয়ে আরো সচেতন থাকলে ক্রেতারা স্বল্পমূলে পশু কিনতে পারবেন।