মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেন ব্রিটিশ ম্যাগাজিনগুলো মেগান মার্কেলকে ঘৃণা করে?

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:২২ পিএম, ২ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার

দুই বছর আগে অভিনেত্রী মেগান মার্কেল ব্রিটিশ প্রেসের কাছে পছন্দের পাত্রী ছিলেন। তারা দাবী করেছিলো যে, তার মত কাউকে ব্রিটিশ রাজ পরিবারে তারা কখনো দেখেনি। কিন্তু সেই মেগান কীভাবে হিরোইন থেকে ভিলেন হয়ে গেলেন প্রেসের কাছে? দুই বছর আগেও ব্রিটিশ প্রেস থেকে বেশ সমীহই পেতেন মেগান। তবে এখন প্রায় প্রতিটি কাজের জন্য প্রেসের সমালোচনার মুখে পড়ছেন তিনি।

গত বছর টাবলয়েডগুলো মেগান সম্পর্কে বিদ্রূপাত্মক লেখা প্রকাশ করতে শুরু করে। অসুস্থতার কারণে মেগানের বাবার বিয়েতে আসতে না পারার ঘটনা। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, তিনি অসুস্থ ছিলেন। তারপর মেগান বিয়েতে যে মুকুট বা টায়রা পরতে চেয়েছিলেন রানী সেটাতে রাজি হননি। কারণ ধারণা করা হয়েছিল সেটা রাশিয়ার তৈরি। আর সে সময়টাতে সার্গেই এবং ইউলিয়া স্ক্রিপালকে রাশিয়ান গুপ্তচরদের হাতে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ছিলো। সেকারণেই রানী চাননি কোনভাবে বিয়ের অনুঠান ঘিরে রাজনৈতিক নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হোক।

আর এখন প্রায় সবকিছু নিয়েই সমালোচনার মুখে পড়েতে হয় তাকে। গত জুনে নিজেদের ফ্রগমোর কটেজ মেরামতের জন্য ২.৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে সংবাদ মাধ্যমের তোপের মুখে পড়েন নবদম্পতি। অভিযোগ করা হয়, খরচ হওয়া পুরো অর্থই এসেছে ব্রিটিশ করদাতাদের পকেট থেকে।

 

দ্বিতীয় সমালোচনাটি আসে তাদের বাগদানের আংটি নিয়ে। মেগানের বাগদানের আংটিতে তিনটি হীরা ছিল। এর মধ্যে দুইটি হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার। আর একটি হ্যারি বতসোয়ানাতে থেকে নিয়েছিলেন। যেখানে তারা একসাথে প্রথম ছুটি কাটিয়েছিলেন। হ্যারি নিজে এই আংটি ডিজাইন করেছিলেন। বিয়ের এক বছর পর মেগান আংটিটি আবারো ডিজাইন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এর সাথে আরো হীরা যুক্ত করেন তিনি। যা নিয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন।

তৃতীয়টি হচ্ছে, বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় মেগানের ব্যক্তিগত সহকারী মেলিসা তৌবাতি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেন রানী এলিজাবেথের সাবেক এক ব্যক্তিগত সহকারী সামান্থা কোহেন। আর চলতি বছরের মার্চে পদত্যাগ করেন মেগানের আরো এক ব্যক্তিগত সহকারী অ্যামি পিকেরিল। যার দায়িত্ব ছিলো মেগানকে রাজপরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করা।

এখন তিনি সমালোচনার মুখে রয়েছেন এক মাসের মধ্যে তিন জন ন্যানিকে বরখাস্ত করার জন্য। ট্যাবলয়েডগুলোর দেয়া তথ্য মতে, ওই ন্যানিরা মেগানকে দুটি নাম দিয়েছিলো-একটি হলো মি-গেইন এবং আরেকটি ডাচেস ডিফিকাল্ট- এগুলো দেয়া হয়েছিলো মেগানের উচ্চ স্বর এবং প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন চাহিদা উল্লেখ করে মেইল পাঠানোর কারণে।

চতুর্থত, ২০১৯ সালের মে মাসে সন্তান জন্মদানও মেগান-হ্যারি দম্পতির সংসারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখেনি। নিজেদের সন্তান আর্চির পায়ের ছবি তারা ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় মিরর ব্যাপক সমালোচনা করে বলে, সন্তান জন্মদানের তিন দিন পরে ভক্তরা শুধু শিশুর পায়ের ছবি দেখতে চায় না। রাজপরিবারের রীতি অনুযায়ী তারা শুধু হ্যারি, মেগান আর প্রিন্স আর্চির ছবি দেখতে চেয়েছিলো।

রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, এটি জনসমুক্ষে করার রীতি থাকলেও ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কিংবা জনগণের কাউকেই অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। বেশ কিছু অজুহাত দেখিয়ে এই দম্পতি অনুষ্ঠানের ছবি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেন। এনিয়ে সমালোচনা করে একটি কলাম প্রকাশ করে দ্য টেলিগ্রাফ যার শিরোনাম দেয়া হয়, মেগান মার্কেলের কাছে খোলা চিঠি: আর্চির খ্রিষ্ট দীক্ষা দেয়ায় গোপনীয়তা কেন? এটা ব্রিটিশ জনগনকে ব্যথিত করে।

রাজপরিবারের কেউ সাধারণ মানুষের সাথে বিবাদে জড়াবে না। তবে মেগান এবং প্রিন্স হ্যারিকে একবার দেখা গেছে "বাকবিতণ্ডায় জড়াতে"। কিছু জায়গায় অটোগ্রাফ দেয়া নিষেধ থাকলেও মেগানকে দেখা গেছে তা খুশি মনেই করতে।

আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় যে, মেগান প্রচলিত সব নিয়ম-কানুন ভাঙতে চান। যা সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না।

ম্যাগাজিনগুলো অনেক সময় রাজপরিবারের এক সদস্যকে অন্য সদস্যের সাথে তুলনা করে তার বিরুদ্ধে লেখে যাতে করে সংঘাত তৈরি হয়।

রানী এলিজাবেথকে দেখানো হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তার দায়িত্ব কতটা নিবিড়ভাবে পালন করে আসছেন তার আদর্শরূপ হিসেবে। একই সময়ে তার বোন প্রিন্সেস মার্গারেট ছিলেন উল্টো। তাকে প্রেমিকের সাথে ঘুরতে, ধূমপান ও মদপান করতে, পার্টিতে ব্যস্ত থাকা এমনকি গোসল করার পোশাকে দেখা গেছে।

প্রিন্সেস ডায়ানার সময় তার নম্রতার জন্য তার ব্যাপক প্রশংসা করা হত কিন্তু তার ভালো বন্ধু সারা ফারগুসন যখন ডাচেস অব ইয়র্ক হলেন তখন তারা একই রকম আচরণ করেনি।

এখন এই প্রবণতা শুরু হয়েছে কেট মিডলটন এবং মেগানের মধ্যে। কেটের ইমেজ তৈরি হয়েছে নিখুঁত এবং "জন্মগতভাবে মা" হিসেবে।

কিন্তু যখন মেগানের প্রসঙ্গ আসে তখন প্রিন্স ফিলিপের একটা উক্তি অনেকেই আওড়ায় 'একজন অভিনেত্রীর সাথে বাইরে যাওয়া যায়, কিন্তু বিয়ে নয়'।

এখন দাতব্যকাজ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ফাটল ধরেছে। উইলিয়াম এবং হ্যারির করা যৌথ দাতব্য কাজ থেকে সরে এসেছেন হ্যারি।

তারা মনে করছেন হ্যারি এবং মেগান আলাদা করে এটা চালাবেন এবং ভিন্ন ভিন্ন কারণে সেটা কাজ করবে।