মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোটি টাকা দেনা, স্ত্রী-কন্যাকে মেরে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ৩ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

কোটি টাকার দেনা মাথায় নিয়ে প্রচন্ড হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক ব্যবসায়ী। নিজে আত্মহত্যা করার আগে স্ত্রী-কন্যাকে মারতে ভাড়াটে খুনি লাগিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনায় ভাগ্য জোরে বেঁচে গিয়েছেন ভারতে মধ্যপ্রদেশের সাগরের ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী। 

এই রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাজারে প্রায় কোটি টাকার দেনাই ওই ব্যবসায়ীকে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল। 

১৭ জুলাই বুন্দেলখণ্ডের সাগর শহরে পেট্রোলিংয়ের সময় পুলিশের নজরে পড়ে রিজিওন্যাল পাসপোর্ট অফিসের সামনে নির্জন রাস্তায় দাঁড় করানো একটি স্যান্ট্রো গাড়িতে ২ জনের দেহ পড়ে রয়েছে। 

পাশে বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে আরও এক মহিলা। ওই গাড়ি থেকে একটি সুইসাইড নোটও পায় পুলিশ। তা থেকে পুলিশ জানতে পারে, গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দু'টি দেহের একটি সিমেন্ট ব্যবসায়ী ব্রজেশ চৌরাসিয়ার। অন্যটি তাঁরই ষোড়শী কন্যা মহিমার। 

 

গাড়ি থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন ব্রজেশের স্ত্রী রাধা। কপাল জোরে তিনি বেঁচে গিয়েছেন। রাধাই পুলিশকে জানিয়েছেন, ব্যাংকে তার স্বামীর ৯০ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ব্রজেশ। 

ঘটনার তদন্তে নেমে ভাড়াটে খুনি রঞ্জন রাইকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। রঞ্জনের আসল বাড়ি বিহারে। পুলিশের কাছে রাইয়ের স্বীকারোক্তি, স্ত্রী-কন্যাকে খুনের অগ্রিম বাবদ তাকে ৯০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। বাকি টাকা কাজ হাসিলের পর দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু, সেই টাকা সে আর পায়নি। 

পুলিশ সুপার জানান, দু'টি দেহে বুলেটের ক্ষত থাকলেও, ঘটনাস্থলে সেদিন কোনও আগ্নেয়াস্ত্র মেলেনি। ফলে, তৃতীয় কোনও ব্যক্তি যে খুন করেছেন, পুলিশ প্রথম থেকেই সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল। ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী পুলিশকে জানান, ঘটনার দিন ব্রজেশ তাকে ও মেয়েকে একটি কিছু পান করতে দিয়েছিলেন। সেটি খাওয়ার পর ঠিক কী ঘটেছিল, তা মনে নেই। কারণ, তিনি হুঁশে ছিলেন না।

 

তবে, পুলিশি তদন্তে উঠে আসে চৌরিসায় স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোন। রিজিওন্যাল পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে, কিছুটা দূরে গিয়ে 'খুনি'র কাজ হাসিলের জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকেন। 

ততক্ষণে রাস্তায় অপেক্ষায় থাকা ওই গাড়ির সামনে গিয়ে ব্রজেশের ষোড়শী মেয়েকে গুলি করে হত্যা করে রঞ্জন রাই। এরপর পরবর্তী টার্গেটকে নিশানা করবে, তার আগেই ঘটনাস্থলের কাছাকাছি লোকজন চলে আসায়, গুলি না চালিয়েই ঘটনাস্থল থেক চম্পট দেয় রাই। 

একটু দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে কাজ হাসিলের কথা জানিয়ে বকেয়া টাকা চাইলে, ব্রজেশ জানান, নিজে দেখে করে টাকা দেবেন। তাকে অপেক্ষায় রেখে কিছু পরেও ওই ব্যবসায়ী না-ফিরলে, গাড়ির কাছে যায় রাই। দেখতে পায় ব্যবসায়ীর নিথর দেহ। এরপর সেখানে থাকা সুরক্ষিত হবে না মনে করেই, ব্যবসায়ীর আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে। 

জেরায় রাই পুলিশকে জানিয়েছে, ব্যবসায়ীর কথামতো সে দু'টি আগ্নেয়াস্ত্রের অর্ডার দিয়েছিল। দু'টি পিস্তলই সে কেনে বিহার থেকে। কেনার টাকা ব্রজেশই তাকে দিয়েছিলেন। 

 

কী ভাবে এই ভাড়াটে খুনির সন্ধান পেল পুলিশ? পুলিশ জানাচ্ছে, ব্রজেশের সিমকার্ডই ধরিয়ে দিয়েছে খুনিকে। রাই সেই সিমকার্ডটি নিজের কাছে রেখেছিল। ধৃতের কাছ থেকে ওই সিম ছাড়াও ৮৫ হাজার টাকা পেয়েছে পুলিশ। 

ফরেন্সিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, বাবা-মেয়ের শরীর থেকে বুলেট উদ্ধার হয়েছে। দু'টি যে ভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র, তা রিপোর্টে পরিষ্কার। ফরেন্সিক রিপোর্টে এ-ও নিশ্চিত করা হয়েছে, গুলি চালিয়ে ব্রজেশ নিজেই আত্মঘাতী হয়েছেন।