মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাপানে জুয়ার আসর ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে বিশাল মসজিদ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:৩৭ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৯ সোমবার

জাপানে একটি অত্যাধুনিক বড় জুয়ার আসর (পাচিঙ্কু) ভেঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে ১০ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ কমপ্লেক্স। রাজধানী টোকিও শহরের ঠিক গা ঘেঁষেই সাইতামা প্রিপেকচারের কোশিগায়া সিটির গামো স্টেশন এলাকায় এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় দেড় হাজার স্কয়ার মিটার সুবিস্তৃত আয়তনের এটি হবে দেশটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স।

জানা গেছে, এটির নাম দেয়া হয়েছে ‘বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স’। এতে থাকবে শিক্ষা, গবেষণা, অতিথিদের আবাসন ও ইসলামি সংস্কৃতি বিনিময়ে ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ও দাওয়াতি বিভাগ। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ বিশেষ করে জাপানিরা ২৪ ঘন্টা ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে এখান থেকে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় দুই হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে সুবিস্তৃত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। প্রবাসী মুসলমান বিশেষ করে বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় জাপান সরকার অনুমোদিত সর্ববৃহৎ এ ইসলামিক সেন্টারটি সারা জাপানব্যাপী দাওয়াহ কার্যক্রমের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।

 

আপাতত বিশাল এ মসজিদটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মাণ করা হলে পুরুষ-নারীদের জন্য পৃথক অজুখানা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। পরে আর্থিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ১০ তলা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

জানা গেছে, বিশাল এ মসজিদের কার্যক্রমের পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা, কুরআন গবেষণা, জাপানিদের জন্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক স্কুল, পূর্ণাঙ্গ হিফজুল কুরআন মাদরাসা চালু করা হবে।

এছাড়া ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান, ইসলাম ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের উপর সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, শিশু ও বড়দের পৃথক কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম ও জাপানিদের জন্য ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় ইসলামি জ্ঞান লাভের বিশেষ বিভাগ থাকছে।

এদিকে জাপানের সর্ববৃহৎ মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন জাপান।

 

শিগগিরই গামো স্টেশন থেকে ১০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে দোতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক এই মসজিদ কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এখানে একসঙ্গে অর্ধ শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এছাড়াও প্রয়োজনে আশপাশে আরো শতাধিক কয়েন গাড়ি পার্কিং করা যাবে।

মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকবে সাধারণ মুসলিম ও জাপানিদের জন্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক স্কুল, পূর্ণাঙ্গ হিফজুল কুরআন মাদরাসা, জাপানি ও অন্যদের জন্য ইসলামি দাওয়াহ বিভাগ, বার্ষিক সাংস্কৃতি বিনিময়ে কারি ফেস্টিভ্যাল ও কোরিওকাই ফর জাপানিজ, ইসলামিক শিক্ষা ও কুরআন গবেষণা কেন্দ্র, রামাদান-ঈদ, নিকাহ কার্যক্রম,ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্পেশাল চাইল্ড কেয়ার ও এক্টিভিটি, কাউন্সিলিং, ক্বিরাত-রচনা-কুইজ প্রতিযোগিতা, সীরাত মাহফিল, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মেহমানদের আবাসন ও বিদেশি পর্যটকদের পরিদর্শন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত কার পার্কিং স্টেশন।

ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমিন বলেন, জাপানিদের মধ্যে ইসলামের কালজয়ী আহ্বান পৌঁছাতে এ কমপ্লেক্স বিশাল ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি মুসলিমদের জন্য নামাজ ও ধর্মীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইসলামি মূল্যবোধের লালন ও পরিস্ফুটনে এ মসজিদ কমপ্লেক্স জাপানে ইসলামের একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

 

প্রসঙ্গত, জাপানে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর মসজিদের সংখ্যাও বাড়ছে। রাজধানী টোকিওসহ জাপানে প্রায় তিন শতাধিক মসজিদ রয়েছে। শুধু টোকিওতেই দুই শতাধিক মসজিদ ও মুসাল্লা (নামাজঘর) আছে। এছাড়া আগামী বছর অলিম্পিক উপলক্ষে জাপান সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন বেশ কিছু মোবাইল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এছাড়াও টোকিওতে বেশ কয়েকটি স্টেশন ও বড় বড় শহরগুলোর স্টেশন ও এয়ারপোর্টগুলোতে স্থায়ীভাবে নামাজের রুম চালু করেছে জাপান সরকার। বর্তমানে টোকিওর ইয়োগি ইউহেরা এলাকায় তুর্কি মুসলিম কর্তৃক তুর্কি নির্মাণশৈলীর চমৎকার একটি মসজিদ রয়েছে। এটি টোকিও জামে মসজিদ নামে পরিচিত।

জাপানে মসজিদ নির্মাণের রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। ভারতীয় মুসলিম অভিবাসীরা ১৯৩১ সালে ‘নাগোয়া মসজিদ’ এবং ১৯৩৫ সালে ‘কোবে মসজিদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। রাশিয়ায় বিপ্লবের সময় তাতার মুসলিমরা জাপানে এসে ১৯৩৮ সালে টোকিও মসজিদ নির্মাণ করে।

এদিকে দেশটিতে কতজন মুসলিম বাস করে, এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা ২ লক্ষাধিক ধারণা করা হচ্ছে। এসব মুসলমানদের ১০ শতাংশই জাপানি বংশোদ্ভূত। বর্তমানে দেশটির লোকসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি।