মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চাপে মিয়ানমার, আলোচনা চায় আরাকান আর্মির সঙ্গেও

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:১০ এএম, ৬ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি স্থিতিশীলতা স্বাভাবিক করতে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় মিয়ানমার সরকার। এ লক্ষ্যে মিয়ানমার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জাও এইচটি। 

শুক্রবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাখাইনে জাতিগত সংঘাত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সেটা সরকার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। রাখাইন সংকট গণতন্ত্র উত্তরণে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

তবে রাজ্যটিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার রাখাইনের উত্তর জোটের রাজনৈতিক দাবির বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাখাইনে জাতিগত নিধনের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ চার পদস্থ সেনা কর্মকর্তার ওপর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে নতুন করে চাপে ফেলেছে। রাখাইনে গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরুর প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হচ্ছে মিয়ানমারকে।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বা তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেয়া উচিত বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

মিয়ানমার গণমাধ্যম বলছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।

ওই বক্তব্যে মাহাথির রাখাইনের মুসলমানরা ‘গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছে’ জানিয়ে বলেছিলেন, মিয়ানমার কখনোই একটি দেশ ছিল না। মিয়ানমার এক সময়ের অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে। ব্রিটিশরা এসে মিয়ানমারকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে শাসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ কারণেই, অনেক উপজাতি মিয়ানমারে (বার্মা) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তবে এখন সময় এসেছে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু ভাবার। রোহিঙ্গাদের এখন অবশ্যই তাদের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, অথবা নিজস্ব রাজ্য গঠনের জন্য তাদের আলাদা অঞ্চল দেয়া উচিত। 

 

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রাখাইন রাজ্য থেকে ৭ লাখেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গাকে নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলেছে- এ রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা এবং গণধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধ করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জাও এইচটি নিজেদের পক্ষ সমর্থন করে বলেন, রাখাইন রাজ্যে যা ঘটেছে তার সূত্রপাত হয়েছে যখন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ২০১৭ সালের আগস্টে সুরক্ষা ফাঁড়িগুলোতে আক্রমণ করেছিল। এতে রাখাইন রাজ্যের শান্তি ও উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আবারও আক্রমণ করেছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র উত্তরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এ দেশে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী এবং রাখাইনের মতো সমস্যা সরকারকে একটি শক্ত অবস্থানে ফেলেছে। এটি সত্য যে আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন এবং আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গণতন্ত্র এমন একটি প্রক্রিয়া যা বহু বছরের প্রয়োজন এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এটি আরো কঠিন হতে পারে।

 

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র আরো বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে মিয়ানমারের নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তবে আমরা ধীরে ধীরে অগ্রগতি করছি।

ইউ জাও এইচটি বলেন, রাখাইনে সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দেশে ফেরত আনার  প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী সচিব ইউ মিন্ট থু-র নেতৃত্বে একটি দল ২৭-২৮ জুলাই বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছে। বলা যেতে পারে যে- সফরটি সফল হয়েছে। কারণ এই শরণার্থীদের সঙ্গে তারা দেখা করতে এবং মিয়ানমার যে প্রত্যাবাসনে রাজি তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয় সশস্ত্র নৃগোষ্ঠীর জোট উত্তর জোটের রাজনৈতিক দাবির বিষয়ে সরকার আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনার জন্য প্রস্তুত।