ছোট মাছের পুষ্টি গুণ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:২০ এএম, ৬ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার
‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এ বিখ্যাত প্রবচনটি থেকে বোঝা যায় মাছ আমাদের খাদ্য হিসেবে প্রিয় এবং আকর্ষণীয়। আমাদের দেশে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। ছোট মাছের মধ্যে পুঁটি, ট্যাংরা, মলা, ঢেলা, চেলা, কাচকি, ফলি ইত্যাদি মাছ জনপ্রিয়। আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে এ মাছ কিন্তু ছোট নয়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় বড়, মাঝারি বা ছোট মাছে তেমন কোনো তফাৎ নেই। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট মাছে পুষ্টির পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। কেননা ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায়, বড়গুলোর কাঁটা খাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না।
ছোট মাছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই বললেই চলে। মাছ খেতে হবে কাঁটাসহ এবং চিবিয়ে। তাতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ছোট মাছের অসম্পৃক্ত চর্বি উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে পারে। কাজেই ছোট মাছ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
ছোট মাছের পুষ্টিগুণ
জলীয় অংশ ৭৫.০ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন বা আমিষ ১৮.১ গ্রাম, চর্বি ২.৪ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.১ গ্রাম, ভিটামিন-সি ১৫ মিলিগ্রাম, লৌহ বা আয়রন ১.০ মিলিগ্রাম, এনার্জি ১০৬ কিলোক্যালরি।
এবার জেনে নিন ছোট মাছের উপকারিতা-
* ছোট মাছে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। কাঁটাসহ ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। মানবদেহে দৈনিক প্রচুর ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা আরও বেশি। হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত দরকারি। তাই প্রতিদিন আমাদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ছোট মাছ খাওয়া উচিত।
* উঠতি বয়সী শিশুদের জন্য প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন-ডি যুক্ত গুঁড়া মাছ খুবই উপকারী। এগুলো শারীরিক গঠন মজবুত করে।
* ছোট মাছে অসম্পৃক্ত চর্বি আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এ ছাড়া আয়রন, প্রোটিন, ফসফরাস, ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি২, ফ্যাটি অ্যাসিড, লাইসনি ও মিথিওনিনেরও ভাল উৎস ছোট মাছ। যাদের শরীরের এগুলোর ঘাটতি রয়েছে তারা নিঃসন্দেহে ছোট মাছ খেয়ে যেতে পারেন।
* ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ থাকে যা রাতকানা, অন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও দৈনন্দিন অনেক শারীরিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম। শিশুদের রাতকানা রোগ ঠেকাতে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ মলা, ঢেলা ও গুঁড়া মাছ খাওয়াবেন। দৃষ্টিশক্তির জন্যও গুঁড়া মাছ খুবই উপকারী।
* যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ গুঁড়া মাছ তাদের ব্ল্যাডপ্রেসার কমাতে সাহায্য করবে।
* ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খনিজ লবণ সমৃদ্ধ গুঁড়া মাছ উপকারী। হৃদরোগী, স্ট্রোকের রোগী ও গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য গুঁড়া মাছ খুবই উপকারী।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছোট মাছ রাখুন। পরিবারের সবাই এই খাবারে অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপনার পরিবার অনেক রোগ থেকে রেহাই পাবে। তবে ছোট মাছে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকায় কিডনী রোগিদের এই মাছ কম খাওয়া ভাল এবং এতে ইউরিক অ্যাসিড বেশি বলে গেঁটে বাতের রোগীদের কম খাওয়া ভালো।