রফতানি নিষেধাজ্ঞায় নিঃশেষ হচ্ছে লিবিয়ার ‘সবুজ স্বর্ণ’ জলপাই
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৭:৩৮ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
ঘন সবুজ দিগন্ত বিস্তীর্ণ জলপাই বাগানের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় লিবিয়ার সংঘাত বিধ্বস্ত ক্ষত। যুদ্ধে টালমাটাল দেশটির অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি এ জলপাই। কিন্তু সরকারের পদক্ষেপের কারণে ‘সুবজ স্বর্ণ’ হিসেবে পরিচিত লিবিয়ার জলপাই তেল আহরণ শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় উৎপাদকদের ‘রক্ষা’ করতে রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ। খবর এএফপি।
২০১১ সালে দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়া শাসন করা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর নিজেদের মজুদ পর্যাপ্ত ক্রুড তেল রফতানির ওপর ব্যাপক মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে দেশটি। অফুরন্ত সম্ভাবনাময় পর্যটন ও মত্স্য শিল্প থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে ব্যর্থ হয়েছে গাদ্দাফির পতনের পর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত উত্তর আফ্রিকার দেশটি।
কর্তৃপক্ষ বারবার জলপাই তেল শিল্প উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে গেলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। বরং তারহুনা শহরের জলপাই চাষী ও শ্রমিকরা এ প্রতিশ্রুতিকে কেবল ফাঁকা বুলি হিসেবেই দেখছেন।
তারহুনার একটি জলপাই তেল নিষ্কাশন কারখানার (প্রেস) মালিক যাহরি আল-বাহরি বলেন, আমরা খুচরা যন্ত্রাংশ পেতে ক্রমাগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ডলারের বিপরীতে দিনার অবমূল্যায়িত হওয়ায় এসব যন্ত্রাংশ দিন দিন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ হলো তেল নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার ব্যয়।
জলপাই গাছের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে কারণে আল-বাহরির খামারে হাত দিয়ে জলপাই তোলা হয়। গাছের নিচে বিশাল শিট বিছিয়ে জলপাই পাড়া হয়। পাকা ফল ময়দার বস্তায় প্রেসে পাঠানো হয়, যেখানে সতর্কতার সঙ্গে তেল নিষ্কাশন করা হয়ে থাকে। বাহরি বলেন, লিবিয়ায় যথেষ্ট জলপাই তেল উৎপাদন করা হয়। তা সত্ত্বেও আমরা কেন রফতানি করতে পারব না, সেটা আমার বোধগম্য নয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে খেজুর, মধু ও জলপাই তেলের মতো লিবিয়ার সবচেয়ে প্রবাদপ্রতিম পণ্যগুলোর রফতানি বন্ধ রয়েছে। সে সময় জারিকৃত এক ডিক্রিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য ‘অস্থায়ীভাবে’ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এর পর রফতানি পুনরায় শুরু করার কোনো তারিখ আজ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি।
নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব পণ্য অন্তত কম মূল্যে ব্যাপক হারে রফতানি করা হচ্ছে, যা লিবিয়ার অর্থনীতিতে কোনো মূল্যই সংযোজন করছে না। বরং ব্যয়বহুল আমদানির মাধ্যমে তেলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে হতাশ চাষীরা উৎপাদিত তেল বিশেষভাবে বোতলকৃত ও প্যাকেজিং কারখানার অভাবে আরো জর্জরিত হয়ে পড়ছে। এগুলোর অভাবে তারা মূল্য শৃঙ্খলের উপরের দিকে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্বের ১১তম বৃহত্ জলপাই তেল উৎপাদক দেশ লিবিয়া। দেশটিতে বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টন জলপাই চাষ হয়। কিন্তু এর মাত্র ২০ শতাংশ থেকে তেল উৎপাদন করা হয়।
রফতানি বন্ধের পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে জলপাই গাছ কমে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগে রয়েছেন চাষীরা। লিবিয়ায় মাত্র ১৭ লাখ বর্গকিলোমিটার চাষযোগ্য জমি রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, দেশটিতে ৮০ লাখের বেশি জলপাই গাছ রয়েছে। তারহানে কয়েক শতাব্দী পুরনো জলপাই গাছেরও দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোয় নগরায়ণ জলপাই বাগানকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।
১৯৬৯ সালে গাদ্দাফি ক্ষমতা গ্রহণের আগে জলপাই গাছ কাটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় উদ্ভূত বিশৃঙ্খলায় ব্যাপক গাছ কাটা শুরু হয়।
লিবিয়ার জলপাই চাষী মুখতার আলি বলে, আজকের দিনে নির্মমভাবে জলপাই গাছ কাটা হচ্ছে কয়লা বানাতে বা কংক্রিটের ভবন তৈরির জন্য।