ভারতের ঘোষণা বেআইনি, আদালতে যাচ্ছেন কাশ্মীরিরা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৫৪ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার
গোটা উপত্যকা জুড়ে ১৪৪ ধারা বলবৎ করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার রাজ্যসভায় এই ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে ভারত। তার এই ঘোষণায় ফুঁসে উঠেছে গোটা কাশ্মীর।
এই সরকারি সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে উল্লেখ করেছে জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট নামের একটি রাজনৈতিক দল। এ নিয়ে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। কাশ্মীরের নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেত্রী শেহলা রশিদ বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করতে সুপ্রিম কোর্টে যাব।’ খবর আনন্দবাজার।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ ৩৭০ অনুচ্ছেদটি আর অস্থায়ী নয় বলে রায় দিয়েছিলো। রায়ে আরো বলা হয়েছিলো, দীর্ঘ সময় সংবিধানের অংশ হিসেবে থাকায় তা প্রায় স্থায়ী অনুচ্ছেদের মর্যাদা পেয়েছে। এই রায়কে ভিত্তি করেই মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। যদিও এ বিষয়ে মোদি সরকারের যুক্তি, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদেই রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তিনি যে কোনো সময় এই অনুচ্ছেদ রদ করে দিতে পারেন। কারণ এই অনুচ্ছেদ অস্থায়ী। সোমবার ৩৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক নির্দেশিকা জারি করেছেন।
রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকায় সেই ৩৬৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংবিধান সভাকে ‘জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা’বলতে হবে। সরকারের ব্যাখ্যা, জম্মু-কাশ্মীরে এখন বিধানসভা নেই। বিধানসভার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতি ওই নির্দেশিকা জারি করেছেন। একইসঙ্গে রাজ্যসভাতেও প্রস্তাব আনা হয়েছে যে, সংসদ রাষ্ট্রপতির কাছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সুপারিশ করছে। তবে শেহলা এই পদক্ষেপকে ‘সংবিধান নিয়ে ধোঁকাবাজি’হিসেবেই দেখছেন।
ভরতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদকে কাজে লাগিয়েই ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়ার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ রয়েছে। তবে তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।
তিনি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভে পাশ হলেও কয়েক কিলোমিটার দূরে গণতন্ত্রের আর একটি স্তম্ভে এর পরীক্ষা হবে।’
তবে ভারেতের আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পি ডি টি আচারিয়ার মতে, সংবিধানের এই নির্দেশিকা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল আনা। দুই-তৃতীয়াংশর সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই বিল পাশ করিয়ে, ৫০ শতাংশ রাজ্যের অনুমোদন নিয়ে সংবিধান সংশোধন হতো। তারপরে রাষ্ট্রপতি কোনো নির্দেশিকা জারি করতে পারতেন। বিল ছাড়া রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা অকার্যকর।’’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য পাল বলেন, ‘৩৭০(৩) ধারা যে সাময়িক, তা সংবিধানেই বলা রয়েছে।’ দেশের রাষ্ট্রপতি কি কোনো নির্দেশ জারি করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে পারেন?
সমরাদিত্য বলেন, ‘সংবিধানেই বলা রয়েছে, তিনি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা করতে পারেন। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি তার সেই ক্ষমতা ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
এ নিয়ে প্রবীণ আইনজীবী অমরেন্দ্র শরণের যুক্তি, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার আগে বিধানসভায় আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল। এ ভাবে তা পাশ করানো যায় না।
বিধানসভা থেকে এই প্রস্তাব সংসদে আনার প্রয়োজন ছিল। আদালতে চ্যালেঞ্জ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ জারি করা বা খারিজ করে দেওয়ারও ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।’
৩৫এ অনুচ্ছেদেই বলা ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের বাইরের কেউ সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি পাবেন না। জমিজমা কিনতে পারবেন না। কিন্তু একইরকম নিয়ম উত্তরাখণ্ড, হিমাচল থেকে অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের মতো রাজ্যগুলিতেও রয়েছে। সেখানেও বাইরের কেউ জমি কিনতে পারেন না। অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের নাগাল্যান্ড, মিজোরামের অনেক অংশে যেতে আলাদা অনুমতি নিতে হয়। তাই মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবের প্রশ্ন ‘এরপর কি বিজেপি শাসিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্যও বিশেষ নিয়ম তুলে দেবে?’
তার মতে, অস্থায়ী হলেও রাজ্যের বাসিন্দাদের ইচ্ছে ছাড়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা যায় না। তাই সংসদে ৩৭০ রদ করার প্রস্তাব পাশের পরে রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা জারি হলেও আদালত তা খারিজ করতে পারে।
এছাড়া পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমেই জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল। সেই ৩৭০ রদ হলে জম্মু-কাশ্মীর কী ভাবে ভারতের অংশ থাকে?