কাশ্মীর সিদ্ধান্তে মোদীকে আরব আমিরাতের সমর্থন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৫৬ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার
জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল এবং রাজ্য দুটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মঙ্গলবার ভারতে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের বরাতে এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ড. আহমেদ আল বান্না বলেন, রাজ্যের পুনর্গঠন স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে উন্নতির লক্ষ্যে মূলত এটি করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এনডিটিভি বলছে, মুসলিম অধ্যুষিত আরব অঞ্চলের সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমন প্রতিক্রিয়া নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
ভারতের মুসলিম নেতারা যখন বিতর্কিত এ বিলটির মাধ্যমে মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার অভিযোগ করছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখছে বিজেপি সরকার।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতকে সমর্থন জানালেও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দুই দেশ তুরস্ক ও মালয়েশিয়া এর বিরোধীতা করেছে।
লাদাখকে পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে চিন। মঙ্গলবার বেজিং জানিয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ ‘সীমান্তবর্তী সার্বভৌমত্ব’ বিরোধী এবং এর জেরে সীমান্তে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকছে।
সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে বরাবরই সমস্যায় জড়িয়েছে চীন । তাদের অভিযোগ, সীমান্তের পশ্চিম ভাগে চীনা ভূ-ভাগের কিছু অংশ ভারত জোর করে নিজের দখলে রেখেছে। মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে চীনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেন, ‘সাম্প্রতিক কালে, ভারত তার নিজস্ব আইনে এমন পরিবর্তন এনেছে, যা চিনের সীমান্তবর্তী সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে। বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত যেন সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মেনে কোনো হঠকারিতা না করে যা ভবিষ্যতে আরো জটিলতা সৃষ্টি করবে।’
অন্য দিকে, সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা খারিজ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দুই পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল সৃষ্টির গোটা প্রক্রিয়াই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য কেরছে সৌদি আরব।
ভারতীয় নেতাদের দাবি, এই পদক্ষেপের মূল কারণ হলো মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়ার পর জম্মু-কাশ্মিরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে রাজ্য থেকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে রাজ্য সভায় বিল পাস করেছে বিজেপি সরকার। জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল ২০১৯ নামের এ বিলের আওতায় জম্মু-কাশ্মীরকে দু’ভাগ করে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ হবে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে কাশ্মীর ইস্যুতে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে সমর্থনের কথা প্রকাশ হলেও পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার বিরোধিতার খবর প্রকাশ হয়েছে। পাকিস্তান সবার আগে সিদ্ধান্তটি ‘একতরফা’ ও ‘অবৈধ’বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসলামাবাদ জানিয়েছে, দিল্লির এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে। একই দিন বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতের সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে তাদের সমর্থন প্রত্যাশা করেন তিনি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, এতে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।