মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিষেধাজ্ঞার কারণে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পাচ্ছে না ইরান

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:৪০ পিএম, ১০ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পাচ্ছে না ইরান। দেশটি বলছে নিষেধাজ্ঞার কারণে চিকিৎসা সামগ্রীতে বিশেষ ছাড় পাওয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওয়াশিংটন এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খবর বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি ব্রায়ান হুক বলেন, ইরানের জনগণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী নিষেধাজ্ঞার বাইরে রেখেছে।

যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলছেন, ফার্মাসিউটিক্যালসের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। কারণ ওষুধ কিনতে আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

জানা গেছে, প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক ওষুধই ইরান নিজে উৎপাদন করে কিন্তু যখন অ্যাডভান্সড মেডিসিনের প্রসঙ্গ আসে তখন দেশটিকে আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয়। এক হিসেবে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় ওষুধের চার শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে ইরান।

এক ভুক্তভোগী বলছেন, ওষুধ পেতে অন্য কয়েকটি শহরে যেতে হয়েছে যে সেখানকার ফার্মেসিগুলোতে আছে কিনা। কয়েকটিতে আছে কিন্তু দাম এতো বেশি যে আমার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

ইরানের এক ওষুধ আমদানিকারক বলেন, গত দুই বছরে ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং দামও বেড়েছে। বিশেষ করে অচেতন করা, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ওষুধ পাওয়াটা কঠিন হয়ে উঠেছে।

ইরান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে স্বাস্থ্য ও মেডিকেল সেবার খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। তবে ওষুধের এ ঘাটতি ও দাম বাড়ার পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।

ইরানের সঙ্গে বিশ্ব শক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তির পর ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে আবার যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে যা কার্যকর হয় শিল্প ও ব্যাংক খাতে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রিচার্ড নিপিয়ো জানান, ব্যবসা চালু রাখতে হলে একটি ব্যাংক পেতে হবে এসব বিষয়ে লেনদেনের জন্য।

ইউকে ফিন্যান্সের পরিচালক জাস্টিন ওয়াকার বলছেন, মানবিক সেবার বাণিজ্য ও পেমেন্ট ইরানের সত্যিই জটিল বিষয়।

তবে ওষুধের মতো মানবিক সরবরাহ এবং এসবের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো শাস্তির আওতায় থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইরানের সরকারি হিসেবে গত ১৬ মাসের ওষুধ ও উপকরণ আমদানির একটি চিত্র পাওয়া গেছে। সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে আমদানি ১৭৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল এবং এরপরই এটি কমতে শুরু করে। চলতি বছর জুড়ে ৬০ শতাংশ কমে মাত্র ৬৭ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে।

ইরানের বাণিজ্যিক অংশীদার ইইউর কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। গত নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর ইরানের কাছে ওষুধ সামগ্রীর বিক্রিও কমে যায় আগের তুলনায়।

জাস্টিন ওয়াকার বলছেন, ব্রিটেনের ব্যাংকগুলোর জন্য মেডিকেল সামগ্রী ইরানে পাঠানো কঠিন তাই এখন সীমিত আকারে ব্যবসা হচ্ছে।

আসলে নিষেধাজ্ঞার পর ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য পদ্ধতিই ওষুধ আমদানি কঠিন করে তুলেছে। এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে ও দাম বেড়ে যাচ্ছে ইরানের বাজারে।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বিধিনিষেধ এড়িয়ে ইউরোপীয়রা সহায়তার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে ইরান। যদিও এটি রাজনৈতিকভাবে আসলেই কঠিন।