মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেষ সময়ে টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখোদের ঢল

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৩৬ পিএম, ১১ আগস্ট ২০১৯ রোববার

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই শেষ সময়ে নীড়ে ফিরছে মানুষ। রোববার ভোর থেকেই টার্মিনালগুলোতে ভিড় করছেন যাত্রীরা। 

রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, শ্যামলী, আসাদগেটের সব বাস কাউন্টার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর, বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দেখা যায় ঘরে ফেরা হাজার হাজার মানুষের ভিড়।

গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের ঢল। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক দিনে খুব একটা সমস্যা না হলেও, গতকাল শনিবার দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী বাসগুলো কিছুটা শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রায় প্রতিটি পরিবহনে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার শিডিউল বিপর্যয়।

রংপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের প্রতিটি রুটের গাড়িতেই এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত শিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশারেফ হোসেন বলেন, শিডিউল বিপর্যয় হয়নি, কিছুটা দেরি হচ্ছে। 

এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নাকাল হয়ে পড়েছেন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষ। মহাসড়কের করটিয়া, নগরজলফৈই, ঘারিন্দা, রাবনা, বিক্রমহাটি, রসুলপুর, পুংলি, এলেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে। কোথাও কোনো গাড়ি চলতে দেখা যায়নি।

বঙ্গবন্ধু সেতু থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, সিরাগঞ্জের অংশে গাড়ি টানতে না পারায় রোববার ভোরে সেতুর টোল বন্ধ থাকা এবং অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এ যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে ১৭টি ফেরি দিয়ে চলছে যানবাহন পারাপার। তারপরও রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সরেজমিনে দেখা গেছে, সারি ঘাট এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে চার কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে এবং তিন শতাধিক ছোট গাড়ি (প্রাইভেটকার) নৌ-পথ পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। আর পাটুরিয়া ঘাটে কিছুটা চাপ থাকলেও পারাপারে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। 

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) পাটুরিয়া ঘাট শাখার বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল বলেন, ভোর থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পরিবহনের বাড়তি চাপ থাকলেও পারাপারে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। 

সদরঘাটে প্রতিবারের মতো এবারো হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চের ছাদে করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বাধ্য হয়ে লঞ্চগুলো ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে বলে মালিকরা জানান। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবে।

সকালে যাত্রী চাপ সামাল দিতে লঞ্চগুলো যাত্রীবোঝাই করে নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। একসঙ্গে অনেক যাত্রী এবং লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের আগে ছেড়ে যাওয়া কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হয়েছে অনেক যাত্রীদের।

বরিশালের যাত্রী রবিউল আলম বলেন, মানুষের ভিড় বেশি। সবাই বাড়ি যেতে চায়। কষ্ট তো একটু হবেই। ঘাটের সিস্টেম ভালো। তবে এতো মানুষের জন্য ঘাট আরো বড় করা দরকার। তাহলে মানুষকে এতোবেশি ঠেলাঠেলি, এত কষ্ট করে লঞ্চে ওঠা লাগতো না।

 

কমলাপুর রেলস্টেশনেও হাজার হাজার যাত্রীকে নিজ গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। অনেককে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়তে দেখা গেছে। তবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয় ঠেকেছে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত। যার ফলে ভোগান্তিতে যাত্রীরা।  

এদিকে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী নিতে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে জড়ো হয়েছে অসংখ্য বাস। ফলে টার্মিনালগুলোর আশপাশের এলাকায় যানজট কিছুটা বেশি। কেননা পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় রাস্তার ওপরেই বাসগুলো পার্ক করতে হয়েছে। সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী পুরো এলাকাই এখন যেন পার্কিংস্পট। আবার মহাখালী টার্মিনালের বাসগুলো তেজগাঁও লিংক রোড থেকে রাস্তার ওপর পার্কিং করা হয়েছে। গাবতলীর আশপাশের রাস্তার অবস্থাও একই।

এছাড়া রেল বা বাসের বাইরে অনেকেই পরিবারকে আকাশপথেও বাড়ি পাঠাচ্ছেন। আবার স্বল্প আয়ের অনেকে ট্রাকেও ফিরছেন বাড়ি। অন্যদিকে রাজধানীর সড়কগুলোতে চিরচেনা দৃশ্যের পরিবর্তন এখনো তেমন একটা চোখে পড়েনি। তবে ব্যাগ হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া মানুষদের দৃশ্য বলছে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা।

 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, এবারে প্রায় এক কোটি মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে।