মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারুণ্যের জয়: ফুটপাত থেকে বিশ্বখ্যাত ফোর্বসের তালিকায়

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:১৭ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯ সোমবার

মাত্র ১১ বছর বয়সে কিশোর ভিকি রায় ঘর ছেড়েছিলেন। তখন তার লক্ষ্য ছিল একটাই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি গিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করবেন। কিন্তু তা হয়নি।

ট্রেনে পানি বিক্রি করে ফুটপাতে রাত্রি যাপন করতেন। ক্ষুদায় জ্বালায় অন্যের ফেলে যাওয়া খাবার খেতে হতো ভিকিকে। অনেম রাত রাস্তায় কাটাতে হয়েছে। সেই রাস্তা থেকেই ভিকি রায় উঠে এসেছেন বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তালিকায়। 

এশিয়া মহাদেশের ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি তালিকা তৈরি করে ফোর্বস। রাস্তা থেকে উঠে এসে সেই তালিকাতেই নাম তুলেছেন ভিকি।

 

সেই জায়গা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বস এশিয়ার ‘৩০ আন্ডার ৩০’ তালিকায় জায়গা পেয়েছেন তিনি।

ফেইসবুকে নিজের জনপ্রিয় পেইজ হিউম্যানস অব বোম্বেতে নিজের জীবনের কাহিনী শেয়ার করেছেন ভিকি। তার এই গল্প মন জয় করেছে হাজারো মানুষের। বেঁচে থাকার তাগিদে ছোট ভিকিকে কখনো অন্যের বাসায় থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করতে হয়েছে। জীবন ধারণের এই সংগ্রাম যে কতটা কঠিন তা টের পেয়েছিলেন হাড়ে হাড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক চিকিৎসকের মাধ্যমে এক এনজিওর সংস্পর্শে আসেন ভিকি।

সালাম বালাক নামের সেই এনজিওর কল্যাণে দিনে তিন বেলা খাওয়া, পোশাক ও মাথার ওপর ছাদের বন্দোবস্ত হয়। স্কুলেও ভর্তি করানো হয় ভিকিকে। বদলে যায় জীবনের রূপরেখা। এই সময় এক ব্রিটিশ ফটোগ্রাফারের সঙ্গে দেখা হয় ভিকির। 

ভিকি বলেন, তার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। রাস্তায় বসবাসের ফলে মানবতার এত মাত্রা আমাকে দেখিয়েছিল যা আগে দেখিনি। আমি চাইতাম তার মতো করে ছবিতে সেটা ফুটিয়ে তুলতে।

 

১৮ বছর বয়সে ৪৯৯ রূপি দামের একটি ক্যামেরা তাকে কিনে দেয় সেই এনজিও। একই সঙ্গে স্থানীয় এক ফটোগ্রাফারের কাছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ভিকিকে।

ভিকি বলেন, সেই ফটোগ্রাফারের সাহায্যে স্ট্রিট ড্রিমস নামের একটি চিত্র প্রদর্শনী করেন তিনি। সেই থেকে তার ছবি খ্যাতি পেতে শুরু করে। মানুষ সেসব ছবি কিনতে শুরু করে। ক্রমে সারা বিশ্ব ঘুরে ফেলেন ভিকি। শুধু ছবি তুলেই নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সান ফ্রানসিস্কোসহ একের পর এক স্থানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার।

ভিকি বলেন, কখনো কল্পনা করিনি আমি নিজের ভাগ্যকে এতটা বদলে ফেলতে পারব। তার ওয়েবসাইট হিউম্যানস অব বোম্বো ডট ইন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে তিনি এমআইটি মিডিয়া ফেলোশিপ পেয়েছেন। ২০১৬ সালে ফোর্বস এশিয়া ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় নাম ঢুকে পড়ে তার।

বুধবার সকালে নিজের জীবনের কথা পোস্ট করেন ভিকি। এখন পর্যন্ত ফেইসবুকে লাইক পড়েছে ৩৩ হাজার। ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ শেয়ার করেছেন তার পোস্ট। ভিকিকে অনলাইনে একজন লিখেছেন, এ জন্যই বলে বৃষ্টির পরে সব সময় রোদ্দুর ওঠে।