অতিরিক্ত মাংস খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩১ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯ সোমবার
কোরবানির ঈদ শুরু। চারিদিকে শুধু খাবার আর খাবার। এরমধ্যে বেশিরভাগ মানুষই খাবেন গরুর গোশত। কিন্তু অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বা শরীরের পুষ্টির জন্য আমরা অনেক পুষ্টিকর খাদ্য বা আমিষ জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকি। কিন্তু এটি উপকারের পাশাপাশি কী ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে সে বিষয়টি আমাদের জানতে হবে।
মাংসের পুষ্টিগুণ:
লাল মাংস যে শুধু ক্ষতিকর তা নয়; এতে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, আয়রণ, জিংক- যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি।
মাংস খাওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ:
একদিনে ৮৫গ্রাম লাল মাংস খাওয়া যেতে পারে। এটা দেখতে মাঝারি সাইজ পাউরুটির টুকরার মতো হবে। সেই সঙ্গে মাংস অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে। খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সালাদ ও সবজি রাখতে হবে। এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। লাল মাংসে ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ কম থাকে বলে হজমে সমস্যা হয়। এজন্য পর্যাপ্ত সালাদ ও সবজি খাদ্য তালিকায় রাখা খুব জরুরি। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। কারণ পানি পরিপাকে সাহায্য করে।
ক্যান্সার:
সম্প্রতি দেখা যায়, অতিরিক্ত মাংস, বিশেষ করে লাল মাংস খাওয়ার কারণে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক অংশে বেড়ে যায়। এতে ফুসফুস ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, মলাশয় ক্যান্সার ও অগ্নাশয় ক্যান্সার হতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের রোগ:
হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগের সঙ্গে মাংস খাওয়ার অনেক সম্পর্ক রয়েছে। বেশি মাংস খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে, স্টক, হার্ট ফেইল হতে পারে। ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে নিয়মিত মাংস খাওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডের রোগ হওয়ার ঝুঁকি ৩ গুণ বেড়ে যায়। হারর্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১ মিলিয়ন মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালায়। এ গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ৫০ গ্রাম বা এর চেয়ে বেশি মাংস খান, তাদের হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় মধ্যে ৪২% এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ১৯%।
পশুকে খাওয়ানো অ্যান্টিবায়োটিকে মানুষের ক্ষতি:
ওজন বৃদ্ধি ও রোগমুক্ত রাখার জন্য পশুকে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। এসব পশুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
পশুকে খাওয়ানো হরমনে মানুষের ক্ষতি:
১৪ মাসের মধ্যে সদ্য জন্ম নেওয়া ৩৭ কেজি ওজনের একটি বাছুরকে ৩ থেকে ৪ মণ ওজনে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন প্রোটিন জাতিও খাবার ও হরমনাল ওষুধ খাওয়ানো হয়। যা পশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
সাধারণত গবাদি পশুকে Estradiol, Progestereone, Zeranol, Trenbolone Acetate নামে হরমনাল ওষুধ খাওয়ানো হয়। এছাড়া ওজন বাড়ানোর জন্য Melengesterol Acetate নামে এক ধরনের হরমোনাল ওষুধ খাওয়ান হয়। এমন পশুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে এসব হরমোন প্রবেস করে। এতে দ্রুত মানুষের ওজন বেড়ে যেতে পারে, ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া অল্প বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন বা স্পার্ম এর সংখ্যা কমে যেতে পারে।
অন্যান্য সমস্যা:
অতিরিক্ত মাংস খাওয়া হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। যেমন-ব্রেইনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, স্মৃতি শক্তি ও চিন্তা শক্তি কমে যায়, শরীরের ওজন বাড়তে পারে।
সতর্কতা:
মাংস জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে অনেকেই হজম প্রক্রিয়া বাড়ানোর জন্য কোমলপানীয় পান করেন- যা একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। আমাদের মাথায় রাখতে হবে পরিমিত খাবার, পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় খাবার এবং পানিই কেবল শরীর সুস্থ রাখতে পারে। এ সময় কিছু পেটের সমস্যা হয় এজন্য হাতের কাছে স্যালাইন রাখা জরুরি।
তাই এই ঈদে অবশ্যই সবাই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। যদিও মাংস একটি লোভনীয় ও মজাদার খাবার। তারপরও সুস্থতার জন্য মাংস খেতে হবে পরিমিত।