কোরবানির পর রান্নাঘর কিভাবে পরিষ্কার রাখবেন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯ সোমবার
এই কোরবানিতে রাঁধুনীদের ধকল গেছে বেশ। সেই সঙ্গে নোংরা হয়েছে রান্না ঘরটিও। যত যত্নসহকারেই রাঁধুন না কেন রান্নাঘর কালিঝুলিতে মাখা। রান্নার সময় মশলার ছিটেফোটা বিভিন্ন জায়গায় যেমনি ছড়ায়, তেমনি মাছ, মাংস রান্না করতে গেলেও তেল কিন্তু ছিটবেই। আর তাতেই আপনার সখের রান্নাঘর নোংরা ও তেল চিটচিটে হওয়াটা স্বাভিক। এ নিয়ে অনেকেই দুঃখ করে থাকেন।
এটা ঠিক যে, পাকশালাটি তকতকে না থাকলে রান্না করতে মন চায় না। আবার নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ধোঁয়া, তরকারির ঝোল, ভাতের মাড় সব কিচেনে জমতে থাকে। এই দাগ জমে শক্ত হয়ে গেলে তা ওঠানোও মুশকিল। তাই নিয়ম করে রান্নার শেষে কিচেনের বেসিন, দেওয়াল থেকে তেল মুছে ফেলে রান্নাঘর সাফ করা খুবই জরুরি।
তবে এগুলো কিভাবে করবেন তা এবার জেনে নিন :
• রান্নার গ্যাসের চুলা ও তার আশপাশের অংশ রান্নাশেষে অবশ্যই মুছবেন। অল্প গরম পানিতে বাসন মাজার তরল গুলে নিয়ে মপ দিয়ে আভেন ও রান্নার জায়গাটি যত্ন করে পরিষ্কার করুন। রান্নার সময়ে পাশে পরিষ্কার কাপড় রাখুন। কিছু ছিটকে দেওয়ালে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে নিন। তখন ফ্রিজ বা মশলাদানি খোলার দরকারেও ওই কাপড় ব্যবহার করুন। এতে দাগ লাগবে না।
• স্পঞ্জে এক ফোটা ডিশওয়াশার মিশিয়ে রান্নাঘরে রাখা ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ আভেন, ব্লেন্ডারের বাইরের অংশ, সিঙ্ক রোজ পরিষ্কার করতে পারলে ভাল। সময়ের অভাবে সপ্তাহে অন্তত দু’-তিন বার সাফ করুন। এ কাজে বেশি দিন ফাঁকি দিলে ওই কালচে বাষ্প মেশানো তেলতেলে আঠালো ভাবটা স্থায়ী হয়ে যাবে। তখন সাধের অ্যাপ্লায়েন্সগুলোর চেহারা ফেরাতে কষ্টটা অনেক বেড়ে যাবে।
• আভেন পরিষ্কার করতে একটি বাটিতে পানির মধ্যে ভিনিগার বা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে তা আভেনে গরম করুন। দু’মিনিট পরে বার করে নিন। সেই বাষ্পই আভেনের চারপাশে লেগে যাবে। পরে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
• ব্লেন্ডারের তরল রাখার পাত্রটি খুলে পাতিলেবু, পানি ও এক ফোটা ডিশওয়াশ দিয়ে আবার চালান। সবশেষে পরিষ্কার পানি ভরে চালিয়ে পানি ফেলে মুছে নিন।
• রান্নাঘর খোলামেলা হলে এবং ভেতরের জিনিসপত্র কম রাখলে চিটে কম হয়। ফ্রিজ, আভেন, মশলার তাক সুদৃশ্য ঢাকনায় মুড়ে রাখাই ভাল। মশলার কৌটা বা অন্য তৈজসপত্র কাবার্ডের ভেতরে রেখে পাল্লা বন্ধ রাখুন। এতে ওগুলো রান্নার তাপ ও ঝুল থেকে রেহাই পাবে। কারণ রান্না করার সময়ে ধোঁয়া উপরের দিকে ওঠে। ওই ধোঁয়া দেওয়াল, তাক আর মেঝেও নোংরা চিটচিটে করে দেয়। এসব সাফাইয়ের জন্য বাজারে প্রচুর লিকুইড ক্লিনার মেলে। এতে স্ক্রাবার ভিজিয়ে সপ্তাহে অন্তত দু’বার (রোজ না পারলে) পুরো জায়গাটা ধুয়ে মুছে শুকিয়ে নিলে রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন থাকবে। মাসে একবার ঝুল ঝেড়ে নিন। মশলার কৌটাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
• ক্লিনিং প্রডাক্টের ব্যবহারবিধি পড়ে নিন। যে ক্লিনার দিয়ে সিরামিক স্ল্যাব বা দেওয়ালের টাইলস পরিষ্কার করবেন, কাঠের তাক তা দিয়ে মোছা চলবে না। সামান্য আয়াসে বাড়িতেই কিচেন ডি-গ্রিজার তৈরি করে নিতে পারেন। হালকা দাগের জন্য গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে পরিষ্কার করবেন। কড়া তেলচিটে ছোপ হলে একটু ঘন ক্লিনার নিবেন। যেমন লেমন বেসড ক্রিম ক্লিনার। এক কাপ পানিতে ১/৪ ভাগ ভিনিগার মিশিয়ে ময়লা অংশে দ্রবণটি দশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই কড়া দাগগুলো উধাও হবে। কাঠের আসবাব হোয়াইট স্পিরিট দিয়ে মুছবেন। সাবধানতার জন্য এক ফোটা ক্লিনার দিয়ে অল্প দেওয়াল বা ক্যাবিনেট মুছে আগে পরখ করে নিন। এতে পেইন্ট বা পালিশের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না দেখে নিন।
• রান্নাঘরে কিচেন চিমনি, হুড, এগজস্ট ফ্যান থাকলে ধোঁয়া, তেল বাষ্প হয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে। এতে রান্নাঘর থাকবে কেতাদুরস্ত। তবে এই প্রডাক্টগুলো নিয়মিত সাফাই জরুরি। পেশাদারকে ডেকে বছরে দু’বার চিমনি সার্ভিসিং করান। অটোক্লিন চিমনি হলেও সপ্তাহে এক দিন তেলের পাইপটি খুলে ধুয়ে নিন। চিমনির চারপাশ রোজ ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে নিবেন। জানালার তাক, গ্রিল, এগজস্ট ফ্যানের খাঁজে খুব ময়লা জমে। প্রশিক্ষিত লোক ডেকে তা সাফ করাতে পারলে ভাল। নিজে করতে হলে একটা ছুরি দিয়ে গ্রিলের কোণ, ফ্যান ব্লেডের ফাঁকে আঁকড়ে থাকা ময়লা প্রথমে চেঁছে নিন। পরে বাসন মাজার সাবান কাপড়ে নিয়ে তা দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেও চলবে।
এত ঝাড়পোঁছের পর নিজের হাত দুটিকেও ধুয়ে মুছে মোলায়েম করে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন