সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রান্নার ভুলে পুষ্টি নষ্ট

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০১৯ রোববার

খাবার থেকে শরীরে ঢোকে পুষ্টি। এই খাবারের জন্যই নানা আয়োজন। কাটাকাটি, ধোয়া তারপরে কড়াইতে মশলার সঙ্গে রান্না করা। আর এর প্রতিটি ধাপ শেষ হয় ভুলের মাধ্যমে। যার ফলে এই খাবার যখন প্লেটে পৌঁছায় তখন আর তেমন পুষ্টি থাকে না। যা খেয়ে অনেক সময় বিপদেও পড়তে হয়।

এবার জেনে নেয়া যাক ভুলগুলো কোথায় কোথায় -

সবজি কাটা ও ধোয়া

সচরাচর সবজি খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করে রান্নার আগ পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। যেসব সবজির খোসা ছাড়াতে হয় না এদেরও বোটার দিক থেকে কেটে ভিজিয়ে রাখার চল আছে। অনেকে আবার ময়লা, বিষাক্ত রং ও কীটনাশকের বিষমুক্ত করার জন্য ভিজিয়ে রাখেন। কিন্তু এই ভিজিয়ে রাখার ফলে সবজির ভিটামিন বি এবং সি–এর প্রায় ৪০ শতাংশ বের হয়ে যায়।

পুষ্টিবিদরা বলেন, সবজি কাটার আগে ভাল করে ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত। তাতে কিছুটা ভিটামিন গেলে যাবে। তবে সবজি বড় করে কাটলে এবং কাটার পর না ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে রান্না করে নিলে ভিটামিনের অনেকটাই রক্ষা পায়। ফাইবার ও পুষ্টির কথা ভাবলে সবজির খোসা না ছাড়ানোই ভাল। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল বা মেদে যারা ভুগছেন তাদের জন্য তো অবশ্যই। তবে বিষাক্ত রং ও কীটনাশকের জন্যই তা করা যায় না। এক্ষেত্রে পাতলা করে খোসা ছাড়াতে পারেন, তাতে দু’দিকই রক্ষা পাবে।

তেলের ধোঁয়া

অনেকের ধারণা গরম কড়াইতে তেল দেওয়ার পর যতক্ষণ না ধোঁয়া ওঠে ততক্ষণ পর্যন্ত মাছ বা সবজি কিছুই দিতে নেই। এটি ভুল ধারণা। বেশি সময় নিলে তেল ভেঙে ধোঁয়া ওঠার সঙ্গে উড়ে যায় এর উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন৷ আর তৈরি করে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালস নামের ক্ষতিকর উপাদানও। যা হাই কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অ্যালঝাইমার, ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগ সৃষ্টির কারণ।

ধোঁয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকাও বিপদ

ধোঁয়ায় সৃষ্টি হওয়া ফ্রি-র‌্যাডিক্যালস যা রান্নার সময় শরীরে ঢোকে। এর হাত ধরেই শুরু হয় হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো নানা রোগ। এছাড়া হাঁপানি রোগীর সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই কড়াই গরম করে তেল দিন। তেলের ধোঁয়া বেরনোর আগেই সবজি, মাছ, মশলা আর যা দেওয়ার দিয়ে ঢেকে দিন। এতে ক্ষতিকর ধোঁয়ার হাত থেকে শরীর যেমন বাঁচবে তেমনি পুষ্টিও থাকবে অটুট।

ভাজায় যত দিক

ছাঁকা তেলে ভাজলে খাবারের ভিটামিন ও প্রোটিন যেমন কমে তেমনি বাড়ে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট, ওজন ও অপুষ্টি। এর ফলে হাইপ্রেশার, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। পোড়া তেলে ভাজলে অ্যালডিহাইড নামে জৈব রাসায়নিকের প্রভাবে ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার, লিভারের রোগ, অ্যালঝাইমার, পার্কিনসনিজমের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।

পুষ্টিবিদরা বলেন, স্বাদের খাতিরে সপ্তাহে এক-আধবার তেলে ভাজা অল্প  করে খেতেই পারেন। তবে স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে ছাঁকা তেলে না ভেজে কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ভাজুন, যাকে বলে শ্যালো ফ্রাই। মুচমুচে ভাজা খেতে চাইলে কিনে নিন এয়ার ফ্রায়ার। এতে বিনা তেলে আলু, বড়া ইত্যাদি সুন্দর ভাজা যায়।

পোড়া তেল নিয়েই যত সমস্যা

অনেক সময় কড়াই কাছিয়ে তেল রেখে দেওয়া হয় পরের রান্নার জন্য। অথবা যে তেলে মাছ, সবজি বা অন্য কিছু ভাজা হয়, পরের রান্নাগুলোতে দেওয়া হয় সেই তেল। এভাবে বার বার গরম হতে হতে পোড়া তেলে ক্ষতির মাত্রা অধিকহারে বাড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পোড়া তেল আর একবার ব্যবহার করা যাবে কি না তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন কোন তেলে কত তাপমাত্রায় ভাজা হয়েছে, তেল কতক্ষণ গরম হয়েছে ও ঠান্ডা হওয়ার পর কীভাবে তাকে রাখা হয়েছে ইত্যাদি।

তবে সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সরিষা, তিল ও নারিকেল তেল উচ্চতাপেও মোটামুটি ঠিক থাকে। কাজেই মাঝারি তাপে অল্প সময় ধরে ডিপ ফ্রাই করলে পরে আর একবার সেই তেলে রান্না করতে পারেন। তবে তাকে ছেঁকে নিতে হবে। তেল ঘোলা হয়ে গেলে বুঝতে হবে তাতে ক্ষতিকর জৈব উপাদান আছে। তখন তা ফেলে দেওয়াই ভাল।