মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলে ক্ষতিপূরণ এক কোটি ৪০ লাখ টাকা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৩৯ এএম, ২৭ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার

‘আকাশ পথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন, ২০১৯’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে বিমান যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

খসড়া আইন অনুযায়ী বিমান দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ না দিলে বিমান কোম্পানিকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০০ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে খসড়া আইনটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানিয়ে বলেন, আমাদের যে বিমান ব্যবস্থাপনা তা আন্তর্জাতিক অনেকগুলো সংস্থার বিভিন্ন কনভেনশন ও প্রটোকলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। মন্ট্রিল কনভেনশন হল বিশেষত যাত্রীদের অধিকার সম্পর্কে; বিমানে আরোহী যাত্রীর মালামাল পরিবহন, মৃত্যুর কারণ ও যাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এগুলো মন্ট্রিল কনভেনশন ডিল করবে। এটার জন্য এই পর্যন্ত আমাদের কোনো আইন নেই। আইন না থাকায় আমরা সুবিধাটা পেতাম না।

শফিউল আলম বলেন, আমরা মন্ট্রিল কনভেনশন সিগনেটরি কিন্তু বিষয়টি আইনে পরিণত করা হয়নি। যাত্রীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনের মধ্যে মোটামুটিভাবে মন্ট্রিল কনভেনশনের প্রভিশনগুলো নিয়ে আসা হয়েছে।

 

‘আইনের মূল ফোকাসটা হচ্ছে বিমানযোগে যাত্রী, ব্যাগেজ ও কার্গো পরিবহন। এগুলোর ক্ষেত্রে যদি যাত্রীর মৃত্যু হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ব্যাগেজ প্রাপ্তিতে বিলম্ব হয় বা হারিয়ে যায় বা ক্ষয়ক্ষতি হয়; কার্গো প্রাপ্তিতে বিলম্ব, হারানো বা ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে এই আইনের মাধ্যমে আমরা প্রতিকার পেতে পারি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, নেপালে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলার একটা বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছিল, তারা যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে তা খুবই সামান্য। এটা কনভেনশনের আওতায় হলে অনেকগুণ; কমপক্ষে জনপ্রতি (মৃতের পরিবার) এক কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো পেতেন। কিন্তু সেটা পায়নি ১২ হাজার ডলারের মতো পেয়েছে। এই আইন চালু হলে ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে।

আকাশপথে যাত্রী-ব্যাগেজ এবং কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলোর দায়-দায়িত্ব খসড়া আইনে সুস্পষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, আঘাতে যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ এক লাখ এসডিআর (এসডিআর হচ্ছে স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস, যা আইএমএফের নিজস্ব মুদ্রা), যা এক লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নির্ধারিত এটা।

 

‘মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে ২ লাখ ৫০ হাজার ফ্রাঙ্ক, যেখানে এক ফ্রাঙ্ক সমান ৯০০ সহস্রাংশ বিশুদ্ধতার সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রাম স্বর্ণের মূল্য। এটা অংক করে হিসাব করতে হবে। মোটামুটি ২২ ক্যারেটের সোনার সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রামের মূল্যমান হচ্ছে এক ফ্রাঙ্ক। এটা ২ লাখ ৫০ হাজার দিয়ে গুণ দিয়ে যা হয় তা পাবে।

তিনি বলেন, এছাড়া ব্যাগেজের ক্ষেত্রে আগে ক্ষতিপূরণ ছিল প্রতি কেজিতে ২৫ ডলার এখন তা ৭০ ডলার করা হচ্ছে। কার্গো ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ২৫ ডলারের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ ২৭ ডলার হচ্ছে।

এসব ক্ষতিপূরণ এয়ারলাইন্সকে দিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এয়ারলাইন্সকে যাত্রীদের ইন্সুরেন্স করতে হবে। ইন্সুরেন্স করলে তাদের সুবিধা। তারা ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেবে।

শফিউল আলম আরো বলেন, কোনো ব্যক্তি আইন বা আইনের অধীনে প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অপরাধ হবে, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া আইনে। যাত্রীর মৃত্যু হলে এয়ারলাইন্সগুলো যদি ঠিক মতো ক্ষতিপূরণ না দেয় তবে তাদের ওপর এই জরিমানাটা আরোপ করা হবে। মন্ট্রিল কনভেনশনে যে ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছে তা না দিলে বিমান কোম্পানিকে এই শাস্তি পেতে হবে।

 

দেশি-বিদেশি যত এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে চলাচল করবে তারা এই আইনের আওতায় আসবে বলে জানান তিনি।

এই আইন কার্যকর হলে বিমান ভাড়া বাড়বে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান ভাড়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটা যাত্রীকে সুরক্ষিত করার জন্য।