‘মিয়ানমার মনে করে চীন-ভারত-জাপান তার পকেটে’
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯ বুধবার
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন, ভারত ও জাপানের সঙ্গে সৃজনশীলভাবে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে একশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিজের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক এই পরিচালক বলেন, ‘মিয়ানমার মনে করে চীন, ভারত ও জাপান তার পকেটে। তাই এ তিনটি দেশের সঙ্গে সৃজনশীলভাবে যুক্ত হতে হবে। দেশগুলোকে বোঝাতে হবে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে তাদেরও ক্ষতি হবে।’
‘দি রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস: টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবল সলিউশন’ নামের ওই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, মিয়ানমার সরকার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন না আনলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে না। এজন্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। তাই এ সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ নয় মিয়ানমারের ওপর নজর দিতে হবে। কারণ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে মিয়ানমার।
২০১৮ সালের এপ্রিলের মাসে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহের সংকলন নিয়ে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। বইয়ের সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার মতো বহুমাত্রিক সমস্যা সমাধানে পাঁচটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানো। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর যেসব সদস্য ওই গণহত্যায় জড়িত ছিল তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবা। যেসব বাণিজ্যিক সংস্থা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তৃতীয়ত, মিয়ানমারের নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ততা। চতুর্থত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ। এজন্য তথ্য প্রযুক্তির পাশাপাশি বার্মিজ ও রোহিঙ্গাদের ভাষায় তথ্য সরবরাহ করতে হবে। পঞ্চমত, তিনি ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মিয়ানমার মনে করছে চীন, ভারত ও জাপান তাদের পকেটে আছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই তিনটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেরও সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, এটি একটি জটিল সংকট । এর সমাধানগুলোও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এই সংকট খুবই দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। এজন্য বাংলাদেশ প্রশংসার দাবিদার, ঘৃণামূলক বক্তব্যের নয়। তাই রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের পাশাপাশি আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে, বাংলাদেশ যাতে কোনো ঘৃণামূলক বক্তব্যের শিকার না হয়। আর টেকসইমূলক সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ড. সৈয়দ রিফাত আহমেদ বলেন, যখন প্রথম ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ শুরু হয়, তখন বাংলাদেশ জরুরি সাড়া প্রদান করে। তবে এই বহুমাত্রিক সংকট নিরসনে মূল দায়িত্ব মিয়ানমারকেই পালন করতে হবে। কিন্তু তার নিশ্চয়তা পাওয়া খুবই কঠিন।
কানাডীয় হাইকমিশনার বেনোয়া প্রিফনটেইন বলেন, নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে মিয়ানমারের আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহি। রোহিঙ্গাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এই সমাধান খুব সহজ হবে না।
আলোচনার সঞ্চালক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিজের নির্বাহী পরিচালক এবং একশনএইড বাংলাদেশের চেয়ারপারসন মঞ্জুর হাসান বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি জানাতে হবে। রাখাইনে গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জোর দিতে হবে।
এছাড়া এতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক আবদুস সালাম কক্সবাজারে কর্মরত সাহায্য সংস্থাগুলোকে সরকারে সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানে না যাওয়ার অনুরোধ জানান।