রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত সেনাদের বিচার করবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:১৭ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনে রোহিঙ্গা গণকবর এবং নৃশংসতা নিয়ে তদন্তে নতুন তথ্য পাওয়ার পর জড়িত সেনা সদস্যদের সামরিক আদালতে বিচার তথা ‘কোর্ট মার্শালের’ ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
শনিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, তদন্তে দেখা গেছে রাখাইনের গু দার পিয়ান গ্রামে নির্দেশনা অনুসরণের দুর্বলতা ছিল সেনা সদস্যদের। এসব সেনা সদস্যদের সামরিক বিচার ব্যবস্থার অধীনে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হবে।
তবে কতজন সেনা সদস্য বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে বা কবে এই কোর্ট মার্শাল অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
২০১৮ সালের ফেব্রয়ারিতে বার্তা সংস্থা এপি’র একটি প্রতিবেদনে রাখাইনের বুথিডং পৌরসভার গু দার পিয়ান নামের ওই গ্রামটিতে রোহিঙ্গাদের অন্তত পাঁচটি গণকবর রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।
তবে তখন মিয়ানমার সরকার গ্রামটিতে কোনো গণকবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সেখানে লড়াইয়ে ১৯ জন জঙ্গি মারা গেছে এবং তাদের যথা নিয়মে কবর দেয়া হয়েছে।
গত শনিবারই সেনাবাহিনী তাদের ওয়েবসাইটে গ্রামটিতে সেনাদের নির্দেশ ঠিকমত পালন না করার কথা জানাল। তবে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি।
ওয়েবসাইটে দোষী সেনাদের কোর্ট মার্শালের ঘোষণা আসার পর বার্তা সংস্থা রয়টার্স টেলিফোনে তদন্ত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে সেনা মুখপাত্র তুন তুন নেই বলেন, এ তদন্ত প্রতিবেদন অত্যন্ত গোপনীয়।
“ওটা সম্পর্কে জানার এখতিয়ার আমাদের নেই। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে এ বিষয়ে আরকটি বিবৃতি দেওয়া হবে।”
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ তোলার ভিত্তিতে ঘটনাটি তদন্তে গত মার্চে একজন মেজর-জেনারেল ও দুইজন কর্নেলের সমন্বয়ে ওই সামরিক আদালত গঠন করা হয়। তদন্ত কাজে গত দুই মাসে তারা দুই বার রাখাইনে গেছেন।
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে কয়েকটি সীমান্ত পুলিশ পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় নয় পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাজ্যে বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়।
প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা ওইসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বা শরীরে পোড় ক্ষত নিয়ে আসেন। নারীদের শরীরে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল।
পালিয়ে আসা ওই সব মানুষদের অভিযোগ ছিল, সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য ওই বছরই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বিভিন্ন দেশের তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তদল গঠন করে।
গত মাসে ওই তদন্তদল তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে বলা হয়, সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্মূল করতে গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন করেছে।
তার আগে গত বছর জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে রোহিঙ্গা মুলসমানদের উপর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ তুলে মিয়ানমার সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং এবং আরো পাঁচ জেনারেলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করতে বলেছিল।
তখন মিয়ানমার ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে।
যদিও গত মাসে মিন অং হলাইং বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য রাখাইনে সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন চালিয়েছে বলে স্বীকার করেন।
রাখাইনে সেনা অভিযানের নামে দমন-পীড়নের অভিযোগের তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে আসছে, রাখাইনে সহিংসতার কারণে সেনা সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করতে খুব কম পদক্ষেপই নিয়েছে মিয়ানমার।
এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আলাদা এক ঘটনায় দশ রোহিঙ্গা গ্রামবাসীকে হত্যায় সেনা সদস্যরা সহযোগিতা করেছে বলে স্বীকার করে মিয়ানমার। এই ঘটনায় চার কর্মকর্তা ও তিন সেনা সদস্যকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এবছরের মে মাসে কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যরা এখন আর আটক নেই।
ওই ঘটনা উদঘাটনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্গনের দায়ে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক যত সময় কারাভোগ করেছেন এই সেনা সদস্যরা তত সময়ও কারাভোগ করেনি।
পাঁচশো দিনেরও বেশি সময় কারাভোগের পর এই বছরের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান রয়টার্সের দুই সাংবাদিক।