শেষ সময়ে বিএনপি নেতাদের দলত্যাগের হিড়িক
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:২৩ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার
ক্ষমতাহীন এক যুগে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশী দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পরে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ ও সদর-বন্দর আসনের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলীয় পদ পদবীর দৌড়াতে হাঁপিয়ে ওঠা নেতাকর্মীরা তাকিয়ে ছিলো আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে।
নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনার স্বপ্নে বিভোর ছিলো ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আর সদর-বন্দরের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু এ দুটি আসনে বিএনপি’র প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় মনোবল ভেঙ্গে গেছে এসব ত্যাগী নেতাকর্মীদের। তাই বিএনপির অনেক নেতাকর্মী রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ আওয়ামীলীগেও যোগদান করছেন।
ইতিমধ্যে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ ও সদর-বন্দর আসনের আওয়ামীলীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
জানাগেছে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এমপি মো: গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি মো: শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি মো: শাহ আলমেরও অবিজ্ঞতা রয়েছে এই আসনে নির্বাচনের। যদিও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান তিনি।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে শাহ্ আলমের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত হলেও শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন জমিয়ত নেতা মনির হোসাইন কাশেমী। এতে করে অনেকটা মনক্ষুন্ন হয়েছেন শাহ্ আলম বলয়সহ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিগত এক যুগে ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয়ে নিজেদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমায় জরিয়ে পরে। ফলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বহুবার জেলও খাটতে হয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে।
মামলা হামলায় বিপর্যস্ত নেতাকর্মীরা মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলো আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে।
কিন্তু এ আসনে অজ্ঞাত মুফতি মনির হোসাইন কাশেমীকে এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন এ অঞ্চলের নেতাকর্মীরা। আর তাই গিয়াসউদ্দিন, মামুন মাহমুদ বা শাহ আলমকে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি কাশেমীর প্রচারনায়, নেই তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরাও। ফলে এ আসনে একেবারেই পিছিয়ে পরেছে ধানের শীষের প্রার্থী কাশেমী।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানাগেছে শাহ আলম আর রাজনীতিই করবেন না।
এদিকে বিএনপি নেতা ও কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তিনি দাবী করেছেন, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
অপরদিকে, সদর-বন্দর আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালাম, সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ।
বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে এদের নেতৃত্বেই রাজপথে ঢেউ তুলেছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। গায়েবী মামলার আসামী হয়ে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান প্রায় দুই মাস যাবত জেল খেটেছেন । কিন্তু এতো ত্যাগ তিক্ষার পরেও এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন জুটেনি এদের কারো ভাগ্যে।
জাতীয় ঐক্রফ্রন্ট গঠন হওয়ায় এ আসনে ধানের শীষ পেয়ে যান আওয়ামীলীগের পট্টিবাজ নেতা এসএম আকরাম। দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রাম তাই বৃথা হয়ে যায় এ অঞ্চলের নেতাকর্মীদের। আর তাই দলীয় প্রার্থী না থাকায় এই আসনে মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের জয়ের পথ অনেকটাই সুগম হয়েছে।
সেই সাথে দলের ত্যাগী নেতারা হারিয়ে ফেলেছেন তাদের রাজনীতির ইচ্ছা। কারণ ত্যাগের মূল্যায়ন না হলে ত্যাগীরা উৎসাহ হারাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে আবুল কালাম এতদিন আকরামের পক্ষে প্রচারণায় নামলেও শেষের দিকে এসে দলীয় কর্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ।এছাড়াও সদর-বন্দর আসনে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করছেন বিএনপি নেতা ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত কাশেম শকু, কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু, কাউন্সিলর সুলতান আহাম্মেদ, হান্নান সরকার, বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা। এদিকে, গুঞ্জর রয়েছে আতাউর রহমান মুকুল, মনিরুল ইসলাম সেন্টু, শওকত কাশেম শকু, হান্নান সরকার বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করবেন।