স্ত্রী সঙ্কট, একাধিক পুরুষের স্ত্রী হতে বাধ্য হচ্ছে এক নারী!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:১০ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
স্ত্রী সঙ্কটের কারণে একজন নারীকে একাধিক পুরুষের স্ত্রী হতে বাধ্য করা হচ্ছে ভারতের উত্তর প্রদেশে। ভারতে ২০১১ সালের আদম শুমারি থেকে জানা যায়, বাঘপত জেলায় মেয়েদের চেয়ে ছেলে সন্তানের প্রতি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বাঘপতে এক হাজার পুরুষের বিপরীতে ৮৫৬ জন নারী রয়েছে।
উত্তর প্রদেশে একটি এনজিওর পরিচালক ডা. নীলম সিং বলেন, নারী-পুরুষের সংখ্যার এই ব্যবধান আরো বেড়েছে।
এনজিও নবোদয়া কল্যাণ সমিতির দেবেন্দ্র কুমার ধামা বলেন, এ অঞ্চলে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নশ্রেণির পরিবারের বাড়িগুলোতে গেলে কোনো মেয়ে দেখা যাবে না। নারী-পুরুষের সংখ্যার অসমতা আরো বেড়েছে। এখন এক হাজার পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা সাতশ।
দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতীয় আইনে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ ও মেয়ে ভ্রুণের গর্ভপাত করানো বেআইনি। কিন্তু কেউ তা মানে না। বিশেষ করে বাঘপতে। মেয়ে সন্তান নিতে চায় না অনেকেই। তাই সেখানে মেয়ের সংখ্যা কম। সে কারণে বাঘপতে গরিব কোনো পরিবারের পুরুষের জন্য কনে পাওয়া যায় না।
এ অবস্থায় উত্তর প্রদেশের বাইরে অন্য কোনো রাজ্য, বিশেষ করে আসাম থেকে অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে কনে কিনে আনা হয়। তারা একজনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু ওই নারীকে আরো কয়েকজনের স্ত্রী রূপেও কাজ করতে হয় যা বহুস্বামীত্ব নামে পরিচিত। এটা মূলত ব্যভিচার। কিন্তু একজনের বিয়ের আবরণে এই ব্যভিচার সেখানে চলে। কেউ এর প্রতিবাদ করে না। এমনকি এনজিওগুলোও নয়। আইন সেখানে কাজ করে না।
লিঙ্গ ব্যবধান ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১১ সাল থেকে এই পন্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার আনুমানিক দুই হাজার ১০০ নারী এই পন্থায় সম্পৃক্ত। তারা অধিকাংশই ভীষণ শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার।
বিয়ের প্রথম দিন থেকেই এ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন মজিদা নামের এক নারী। তার জন্ম উত্তরাখন্ডে। তার বাবা-মা দু’জনই আইসক্রিম বিক্রি করেন। কিন্তু তাতে সন্তানদের ঠিকমত খাবার জোটে না। তারা মনে করেছিলেন যে মজিদাকে বিয়ে দিলে সে খেয়ে পরে বাঁচবে। ১৭ বছর বয়সে উত্তর প্রদেশের এক লরি ড্রাইভারের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। তার স্বামীর পরিবার কনে সঙ্কটের কারণে অন্য দুই ছেলেকে বিয়ে দিতে পারেনি।
শিগগিরই মজিদা তার স্বামীর বড় দুই ভাইয়েরও স্ত্রীতে পরিণত হন যাদের তিনি বা তার পরিবার চিনতেন না। মজিদা প্রথমে এতে রাজি না হলে তাকে ধর্ষণ ও মারধর করা হয়।
তিনি জানান, তারা আলাদা আলাদা দিনে আমার কাছে আসে। কে কোনদিন আসবে তা তারাই ঠিক করে। মজিদা দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু কোন ভাই যে তাদের বাবা তা তিনি জানে না।
মজিদার পরিবার এই অত্যাচারের কথা জানে এবং পুলিশকে তারা জানিয়েছেও। কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে টাকা দিতে হয়। সে টাকা দেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই বলে কোনো ফল হয়নি। যেহেতু তারা অন্য রাজ্যের লোক তাই এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে তাদের পুলিশকে টাকা দিতে হবে।
মজিদা বলেন, তার মত একই পরিস্থিতির শিকার কয়েকজন নারীর কথা তিনি জানেন।
অ্যাকশন এইড ইন্ডিয়ার প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালিদ চৌধুরী বলেন, উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশে এই ‘বহুস্বামী’ প্রথা চালু আছে। এই পরিস্থিতির শিকার নারীর অবস্থা অত্যন্ত করুণ ও নিরাপত্তাহীন। তাদের সঙ্গে ক্রীতদাসীর মত আচরণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষেই তারা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে। যেহেতু এখানে একটি বিয়ের ছাপ পড়ে তাই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না।