যাদের কাঁধে ঝুলত রাইফেল তারাই এখন ফ্যাশন মডেল
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:২৭ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রোববার
নতুন নতুন পোশাকে সজ্জিত মডেল কন্যারা। হেঁটে চলেছেন ফ্যাশন শোয়ের মঞ্চে। সামনে বিচারক ও দর্শকদের সমাগম। দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা শহরে গত সপ্তাহে একটি ফ্যাশন শো হয়ে গেল। সে আর কী এমন ব্যাপার? দুনিয়ার কত শহরেই তো রোজ কত ফ্যাশন শো হচ্ছে।
তবে মজার বিষয় হলো, যারা ওই ফ্যাশন শো-এর আয়োজন করেছেন তারা আগে গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। ফ্যাশন মডেল হিসেবে র্যাম্পে হেঁটেছেন এমন অনেক নারী, যাদের কাঁধে আগে ঝুলত স্বয়ংক্রিয় বন্দুক। তাদেরই একজন মেলিনা রেইয়েস।
তিনি বললেন, এই ফ্যাশন শোয়ের পোশাকগুলো তৈরি করেছি আমরা। সেই পুরুষ ও নারীরা যারা শান্তির জন্য বাজি ধরে আমাদের রাইফেল পিছনে ফেলে এসেছি। আমরা এভাবেই চলতে চাই। এভাবেই শান্তির পথে তারা চলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য বড় রকমের সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
গেরিলা যোদ্ধারা যখন ফ্যাশন শো’তে
ফ্যাশন অনুষ্ঠানটির নাম দেয়া হয় পাথালেরা। এটি স্প্যানিশ ভাষায় দুটি শব্দের মিলনে তৈরি, যাদের একটির অর্থ শান্তি এবং অন্যটির অর্থ ক্যাটওয়াক। মানে দুইয়ে মিলে শিরোনামের মানে দাঁড়ায় শান্তির জন্য ক্যাটওয়াক।
এসময়, মডেলদের হাতে ধরা ছিল এক একটি প্ল্যাকার্ড, তাতে ছোট ছোট নানান বাক্য বা শব্দগুচ্ছ লেখা। কোনোটির মানে, আমরা মেনে চলছি। কোনোটিতে বলা হয়েছে, প্রত্যেকে শান্তির জন্য। কোথাওবা ফ্যাশন একটি রাজনৈতিক কাজ।
কয়েক দশক ধরে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে এফএআরসি- কলম্বিয়ার বৈপ্লবিক সশস্ত্র বাহিনী। বহু রক্তক্ষয় এবং ধ্বংসকাণ্ডের পরে ২০১৬ সালে সরকারের সঙ্গে তাদের এক শান্তিচুক্তি হয়। যোদ্ধারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা শুরু করে। নানা ধরনের কাজে যোগ দেয় তারা। তাদেরই একটি অংশ ফ্যাশন ব্যবসায় ঢোকে।
ফ্যাশন মডেল
কলম্বিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পরে সম্প্রতি এফএআরসি শান্তি চুক্তি বাতিল করার কথা জানিয়েছে, তাদের অভিযোগ- নতুন সরকার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি চুক্তিতে ছিল, তা মানছে না। অর্থাৎ, ভূতপূর্ব যোদ্ধারা আবার জঙ্গলে ফিরে যেতে পারেন, সূচসুতোর বদলে হাতে তুলে নিতে পারেন বারুদগন্ধী কারবাইন।
উক্ত অনুষ্ঠানের, ফ্যাশন ডিজাইনার আনখেলা মারিয়া এররেরা। তিনি কলম্বিয়ার পার্বত্য এলাকার ইকোনোন্থোর ত্রিশজন গেরিলা যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেন। তার কথায়, আমাদের তৈরি করা পোশাক শান্তির বার্তা বহন করে। কিছু পোশাক তৈরি করেছেন প্রাক্তন যোদ্ধারা।
তবে, তাদের পাশাপাশি হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন বিদ্রোহীদের আক্রমণে নিহত মানুষের পরিজন। তাই আমাদের কাজের মধ্যেই রয়েছে ক্ষমা এবং পুনর্মিলনের বাণী স্থানীয় কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যেই রাজধানীতে ওই ফ্যাশন শো আয়োজন করেন তারা। কয়েক শো মানুষের সামনে তারা দেখালেন নিজেদের সৃষ্টি।