রাখাইনে গণহত্যা চালিয়েছে মিয়ানমার : মাহাথির
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:১৬ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
রাখাইনের অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
জাতিসংঘ সদর দফতরে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকালে ওআইসি সেক্রেটারিয়েট ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ কথা বলেন মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা গণহত্যা ও সেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই সংকট এখন আর মিয়ানমার বা বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে।
বিশ্বের অন্য দেশগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মাহাথির বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ ও আমাদের সঙ্গে অন্যরাও যোগ দেবেন আশা করি। এই সংকটের অবসান হওয়া উচিত এবং তা এখনই।”
এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব থাকায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনাও করেছেন তিনি।
এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন প্রমুখ।
রাখাইনে মিয়ানমারের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে হাস্যকর মন্তব্য করে মাহাথির বলেন, মিয়ানমার যখন সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে, তখন তারা আসলে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে দেশ থেকে তাড়াচ্ছিল।
লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে প্রাণ ভয়ে পালিয়েছে তাদের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থায়। সেখানে যা হয়েছে তা রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাস। তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষ অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এমনকি সেখানে পুরো একটা প্রজন্ম নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে দেখা গেছে। কিছু সৌভাগ্যবান মিয়ানমার থেকে পালাতে পেরেছে। কিন্তু এখন তারা আবার মাতৃভূমিতে ফিরতে পারছে না।
মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণহত্যা, ধর্ষণসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল মিয়ানমারে। ফলে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালায়, যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারে। বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
মালয়েশিয়া এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে জানিয়ে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বেশি। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই কম।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। অনেক রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত, রাখাইন রাজ্যে তাদের স্থান হয়েছে অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পে।
বিশ্ব এসব কুখ্যাত বন্দিশিবির সম্পর্কে জানলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। তারা সেখানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও মানবাধিকারকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
মাহাথির বলেন, যদি লুকানোর কিছু না থাকে, তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখাতে এত বাধা কেন? জাতিসংঘ প্র্রতিনিধিসহ সাহায্যকারী কর্মীদের সেখানে পরিদর্শন ও সেখানকার ক্যাম্পে যারা আছে তাদের সহায়তার সুযোগ দিক।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের উচিত এ সংকট সমাধান করা। প্রত্যাবর্তন প্রথমেই প্রাধান্য পাওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়টি।