যে ৮ ড্রোন দিয়ে সৌদির সঙ্গে যুদ্ধের গতি বদলে দেয় ইয়েমেন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:১৮ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার
সৌদি আরবের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সমীকরণ সফলভাবে বদলে দিয়েছে ইয়েমেনের সেনাবাহিনী এবং আনসারুল্লাহ হুথি আন্দোলন। দেশে তৈরি ৮ চালকহীন বিমান বা ড্রোন দিয়ে যুদ্ধের এ সমীকরণ পুরোপুরি পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছে ইয়েমেন।
আরবি সংবাদ পোর্টাল আনসারুল্লাহর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র এবং চালকহীন সামরিক বিমান বা ড্রোন তৈরির মধ্য দিয়ে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। পাল্টে যায় যুদ্ধের কৌশলগত সমীকরণও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের হাতে বর্তমানে রয়েছে ১১ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার কোনো কোনোটি পুরোপুরি নিজস্ব প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে দেশীয় ভাবেই তৈরি করেছে ইয়েমেন। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি অনুসারে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে ইয়েমেন।
এদেরই অন্যতম হলো, ১৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম পাখাওলা ক্ষেপণাস্ত্র কুদস-১।
প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে ইয়েমেনের যুদ্ধোপযোগী এবং নজরদারিতে ব্যবহারযোগ্য ৮ চালকহীন বিমান বা ড্রোনের পর্যালোচনা। এসব চালকহীন বিমানই শেষপর্যন্ত যুদ্ধের সমীকরণে পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে সীমান্ত অতিক্রম করে সৌদি আরবের গভীরে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হামলা হয়েছিল চলতি মাসের ১৪ তারিখে। এ হামলায় ইয়েমেনের যুদ্ধোপযোগী ১০ চালকহীন বিমান অংশ নেয়। সৌদি আবকাইক এবং খুরাইস তেল স্থাপনার ওপর চালানো এ হামলার মধ্য দিয়ে রিয়াদের তেল উৎপাদন দৈনিক ৫৭ লাখ ব্যারেল হ্রাস পায়। এতে সৌদি আরবের অপরিশোধিত তেল এবং গ্যাস উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায় বেশ উল্লেখযোগ্য ভাবেই।
যে ৮ চালকহীন বিমানের কারিগরি পর্যালোচনা প্রকাশ করা হয়েছে সে গুলো হলো-
হুদ হুদ
নজরদারির কাজে ব্যবহৃত চালকহীন এ বিমানে ছবি তোলার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। আকারে ছোট হওয়ায় শত্রু একে সহজে রাডার দিয়ে শনাক্ত করতে পারে না। এ ছাড়া, এর ইঞ্জিনের শব্দও তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় ভূমি থেকে তা প্রায় শোনাই যায় না। এমনকি লেসারসজ্জিত রকেট দিয়েও একে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা শত্রুর জন্য প্রায় ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকাশে একাধারে ৯০ মিনিট উড়তে সক্ষম হুদহুদের পাল্লা ৩০ কিলোমিটার।
রাকিব
রাকিব নামের নজরদারির কাজে ব্যবহৃত লেজার সজ্জিত চালকহীন বিমান দিয়ে শত্রুর অবস্থান সরাসরি নির্ণয় করা যায়। এতে ছবি তোলার কয়েকধরনের প্রযুক্তির পাশাপাশি অবলোহিত আলোকচিত্র ধারণ প্রযুক্তিও রয়েছে। ফলে অন্ধকারেও কোনো বস্তুকে শনাক্ত করতে এ আলোকচিত্র প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যায়। সাধারণ ভাবে মানুষের চোখ ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অর্থাৎ বেগুনি থেকে লাল রং পর্যন্ত দেখতে পায়। এর বেশি বা কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হলে মানুষের চোখ আর তা দেখতে পায় না। টানা ৯০ মিনিট উড়তে সক্ষম রাকিবের পাল্লা ১৫ কিলোমিটার। পদাতিক বাহিনী সহজেই এটি বহন করতে পারে।
রাসেদ
নজরদারির উপযোগী চালকহীন বিমান রাসেদ দিয়ে শত্রুর লক্ষ্যবস্তু নির্ণয় করা এবং যুদ্ধক্ষেত্রের ওপর নজর রাখা যায়। অত্যাধুনিক ছবি তোলার এবং মানচিত্র তৈরির প্রযুক্তিতে সজ্জিত এটি।
সামাদ-১
সামাদ-১ হলো নজরদারির উপযোগী চালকহীন বিমান। ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার সামাদ -১ লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজর রাখতে এবং সংগৃহীত তথ্য সরাসরি যুদ্ধ পরিচালনায় জড়িত কক্ষে পাঠিয়ে দিতে পারে।
কাসেফ-১
যুদ্ধ করতে সক্ষম কাসেফ-১ বহন করতে পারে ৩০ কিলোগ্রাম বোমা। শত্রুর অবস্থান নির্ণয় এবং হামলার চৌকস ব্যবস্থা সজ্জিত এ চালকহীন বিমানের বহনকৃত বোমার ধরণও যুদ্ধ-অভিযানের প্রকৃত অনুযায়ী বদলে দেয়া যায়।
কাসেফ-কে২
কাসেফ-কে২ হলো যুদ্ধ করতে সক্ষম চালকহীন বিমান। জানুয়ারি মাসে এর উন্মোচন করেছিল ইয়েমেন। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিস্ফোরক বহনে সক্ষমতার পাশাপাশি এটি লক্ষ্যবস্তুর মাত্র ১০ মিটার ওপরে বিস্ফোরিত হতে পারে। ফলে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এটি গোলার টুকরার মতো ছড়িয়ে পড়ে।
সামাদ-২
১৩০০ কিলোমিটার পাল্লার সামাদ-২ হলো যুদ্ধ করতে সক্ষম চালকহীন বিমান। রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম সামাদ-২’এ রয়েছে বেতার সংকেত অচল করে দেয়ার প্রযুক্তি। কৌশলগত অভিযানের সক্ষমতা সম্পন্ন সামাদ-২ দিয়েই ২০১৮ সালের জুনে সৌদি তেল ক্ষেত্রে হামলা করেছিল ইয়েমেন।
সামাদ-৩
রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম যুদ্ধ উপযোগী ১৭০০ কিলোমিটার পাল্লার সামাদ-২’এ রয়েছে লক্ষ্যবস্তুকে ওপর থেকে হামলা করার সক্ষমতা। অভিযানের প্রয়োজনে এটি ক্যামিকেজ বা আত্মঘাতী হামলাও করতে পারে।
২০১৫ সালের ২৬ মার্চ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল সৌদি আরব। রিয়াদ ভেবেছিল দরিদ্র ইয়েমেনকে কয়েক মাসের মধ্যেই আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পারবে সৌদি আরব। কিন্তু চার বছরের বেশি সময়ে হতে চললেও রিয়াদের সে খোয়াব এখনও পূরণ তো হয়নি বরং ইয়েমেনের যুদ্ধের চোরাবালির গভীরে আটকে গেছে সৌদি আরব। ইয়েমেনের সেনাবাহিনী এবং হুথিদের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে এমন দিশেহারা অবস্থায় পড়েছে রিয়াদ।