শেখ হাসিনা, অর্জনে যার ৩৯ পদক-সম্মাননা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনেও সফল। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। দেশের পাশাপাশি তাঁর ঝুলিতেও জমেছে অনেকগুলো অর্জন। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনা অর্জিত আন্তর্জাতিক পদক ও পুরস্কারের সংখ্যা ৩৯টি।
সর্বশেষ জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চ্যাম্পিয়ন অব স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ইউনিসেফ আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদরদফতরে ‘ইমিউনাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
এছাড়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাম্বাসেডর টি পি শ্রীনিবাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ পদক হস্তান্তর করেন।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ, বিশেষ করে নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় তাঁর অঙ্গীকারের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালামের স্মৃতির স্মরণে প্রবর্তিত এ পদক দেওয়া হয়।
এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন পর্যায়ের পদক প্রদান করে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তাঁর মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন।
চলতি বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়। বার্লিনে ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন প্রদত্ত এ পদক গ্রহণ করেন জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। নারীর ক্ষমতায়ন ও দক্ষিণ এশিয়ায় অনন্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে এ পদক দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সমাজসেবা, শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অসাধারণ ভূমিকার জন্যও পদক অর্জনের মাধ্যমে সম্মানিত হয়েছেন।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকংভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে দুটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে।
বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য গত বছরের ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল ওমেন’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব ওমেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক ভোজসভায় মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা জানায়। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বের প্রায় ১৫শ নারী নেতৃত্বের উপস্থিতিতে গ্লোবাল সামিটের প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদের কাছ থেকে তিনি গ্লোবাল উইম্যান’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম আন্তর্জাতিক মহলের বাড়তি মনোযোগে আসেন ১৯৯৮ সালে। এ বছর দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রীকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।
১৯৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তরের সময় ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেন, জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এরপর থেকে বিশ্বশান্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, নারী শিক্ষা এবং আইসিটি উন্নয়নে শেখ হাসিনা তার অঙ্গীকার প্রতিপালনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক একাডেমিক কমিউনিটি শেখ হাসিনার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম এবং ভারতের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস এবং মানবিক বিষয়ে ৯টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
২০১০ সালে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। দেশের উন্নয়নে তাঁর অব্যাহত অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এ পদক প্রদান করা হয়।
উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তাকে এ পদক দেওয়া হয়।
এছাড়াও নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুবার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমানো এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে ওই সম্মাননা দেওয়া হয়।
এছাড়াও পার্ল এস বাক এওয়ার্ড (১৯৯৯) সিইআরইএস পদক, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড (২০১১, ২০১২) ও নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭) পেয়েছেন শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে একটি সনদ প্রদান করে। খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তাকে ওই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টস এ ভূষিত করে। এছাড়াও তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ প্রদান করে।
১৯৯৯ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দেসিকোত্তামা ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে।
২০০৫ সালে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ওই সম্মাননা দেওয়া হয়।
দেশে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০০০ সালে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস তাকে অনন্য সম্মাননা প্রদান করে।
২০১৫ সালে শেখ হাসিনা পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ বৈশ্বিক পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী পদক্ষেপে নেওয়ায় তাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করা হয়। নারী ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
ওই বছরই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইউএন উইমেন প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম তাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার প্রদান করেন।