শিক্ষিত তরুণরা কৃষিতে
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৩০ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রোববার
একটি সমন্বিত কৃষি খামারকে অনায়াসেই লাভজনক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভাবতে পারছেন তারা। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কৃষির নতুন নতুন খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে এগিয়ে আসছেন তারা। বিশ্নেষকরা মনে করেন, কৃষিতে নানা ধরনের সহায়তা বাড়ছে। ঋণের সুযোগ বেড়েছে, কৃষি সহায়তা বেড়েছে। আর তাই শিক্ষিত তরুণরা কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে কৃষিতে আত্মনিয়োগ করে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কৃষি নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে কৃষির বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষি উদ্যোগকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন ধরনের ফসল ও পণ্য উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ উদ্যোক্তা। প্রচলিত ধারার বাইরে বিকল্প খামারের দিকেও ঝুঁকছেন দেশের তরুণরা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠছে কচ্ছপ, উট, উটপাখি, টার্কি, কুমির, ব্যাঙ এমনকি সাপের খামারও। বিশ্বে নানা ধরনের খামারের অপার সম্ভাবনার দ্বার রয়েছে। বাংলাদেশেও তা খুলতে শুরু করেছে। নতুন রূপ পাচ্ছে কৃষি। শিক্ষিত তরুণরা নানা সূত্র থেকে কৃষিবিষয়ক তথ্য জোগাড় করতে পারেন। তাদের কাছে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার কৃষির খবর আছে। এ কারণে সহজেই নতুন কিছু গ্রহণ ও প্রচলন করতে পারেন। এখন বাংলাদেশের তরুণদের হাত দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষ ধরনের কমলা ম্যান্ডরিনের চাষ হচ্ছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলে যাচ্ছে। আর তরুণরা সেই বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন ফসল ও ফলের উৎপাদনে যাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, এখন কৃষিকাজে জড়িতদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। এর ফলে কৃষিকাজে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ। তিনি বলেন, কৃষি এখন অর্থ আয়ের খাতে পরিণত হচ্ছে, যা তরুণদের আকৃষ্ট করছে। কৃষিকাজের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ আশা জাগানোর মতো। এটা কৃষির একটি ঐতিহাসিক বাঁক পরিবর্তন।
আরো পরুন : সৌদি ভ্রমন ভিসা ৪৯ দেশের জন্য
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে, সবজি চাষের জমি বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে প্রথম, আর উৎপাদন বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সবজি উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। ফল উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে খাতটি অবদান তো রাখছেই, পাশাপাশি বিশ্বেও একটি ভালো অবস্থানে নিজেকে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মৎস্য সম্পদ (মাছ, আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী ও শামুক) উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম স্থানে। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ ৪১ লাখ টন। আর এসব সাফল্যের ধারায় তরুণদের অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা যোগ করছে বলে মনে করেন বিশ্নেষকরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলা রঞ্জন দাশ বলেন, সনাতন পদ্ধতিকে বদলে আধুনিক পদ্ধতির কৃষিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষিত তরুণরা এখন কাণ্ডারির ভূমিকায়। তাই আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রকল্প এবং বিনামূল্যে বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হয়। তরুণদের বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দিলে দেশের কৃষি খাতের রূপান্তর আরও দ্রুত হবে বলে মনে করেন খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) সভাপতি ও ইরি বাংলাদেশের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জয়নুল আবেদিন।