রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ষষ্ঠী পূজা আজ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:১১ এএম, ৪ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার

জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যে এসেছেন। বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে।

বৃহস্পতিবার গোধুলি লগ্নে মন্দিরে মন্দিরে দুর্গা দেবীর বোধন হয়েছে। আজ শুক্রবার ষষ্ঠী পূজা। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গা দেবীর মর্ত্যে আগমন ঘটবে। এবার দেবীর আগমন-গমন (বিদায়) দুটোই ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে। শাস্ত্রমতে, দেবীর ঘোটকে আগমন ও গমনের ফল শুভ নয়। এতে অমঙ্গল অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এই দুর্গাপূজা। ধর্মমতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন– বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন- দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। দুর্গা পূজার সঠিক সময় বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রাজা রামচন্দ্র এই শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গা পূজার প্রচলন হয়।

বাঙালিদের কাছে শারদোৎসব নামে পরিচিত দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে। দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য আজ সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হয়েছে।

শনিবার মহাসপ্তমী, রবিবার মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা এবং ৭ অক্টোবর মহানবমী পূজা হবে। সর্বশেষ ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে টানা পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্দিরগুলোতে আগামী শনিবার মহাসপ্তমীতে সকাল থেকে পূজা চলবে, এছাড়া দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনও করা হবে। এদিন দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। মহাষ্টমীতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা, দুপুরে সন্ধিপূজা এবং বিকেলে মহাপ্রসাদ বিতরণ হবে। নবমীতে সকাল থেকে পূজা চলবে এবং সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা হবে। বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকেই পূজা হবে এবং বিকেলে বিজয় শোভাযাত্রা শেষে বিসর্জন হবে। দুর্গা দেবী স্বর্গালোকে ফিরে যাবেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও এলাকাভিত্তিক পূজা কমিটির দেয়া তথ্য মতে, সারা দেশে ৩১ হাজার একশটি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২৩৭টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সারাদেশে থেকে এখনো চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই মুহুর্তে মণ্ডপগুলো জোর প্রস্তুতি চলছে। অধিকাংশ স্থানে ইতোমধ্যে আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু মণ্ডপের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

 

পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্ততি এখন শেষ পর্যায়ে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ঢাকেশ্বরী মন্দিরে থাকছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। এছাড়া রাজধানী রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দির, বনানী মাঠ, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, কলাবাগাম মাঠ এবং সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপসহ দেশের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, দেবীর আবাহনী সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনা সভা এবং ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান আয়োজন থাকবে।

এদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে মন্দিরের পাশাপাশি সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সারাদেশে ৫ অক্টোবর থেকে মণ্ডপগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নারী স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশও উপস্থিত থাকবে। এছাড়া মণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিক্টেটর থাকবে। পূজামণ্ডপে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা সদরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থাকবে। জরুরি সেবা ৯৯৯ সার্ভিসও কার্যকর থাকবে। যে কোনো সমস্যায় সেখানে ফোন দিলে সেবা পাওয়া যাবে। আর প্রতিমা বিসর্জনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সে সময় উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড ও সীমান্তে বিজিবি টহলে থাকবে।

দুর্গা পূজা উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেবী দুর্গার আগমনের ক্ষণে সব অসুর, অশুভ অপশক্তি পরাজিত হোক, আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হোক। সবাই মিলে আমরা এগিয়ে যাই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে।