শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ১৭ ১৪৩১   ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

পূজায় অংশ নেওয়ায় নুসরাতকে হত্যার হুমকি

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:০৬ এএম, ৯ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

এবার দুর্গাপূজায় মহাঅষ্টমীতে স্বামীর সঙ্গে পূজামণ্ডপে গিয়ে অঞ্জলি দেন অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। তার পূজার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকে। তবে একজন মুসলমান হয়ে পূজায় অংশ নেওয়ায় সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এমনকি হত্যার হুমকিও পেয়েছেন। 

 

নুসরাতের পূজায় অংশ নেওয়া, ঢাক বাজানো ও নাচার ভিডিও দেখে ব্যাপারটা যতটা উৎসবমুখর মনে হচ্ছিল, পরিণতি মোটেও তেমনটা থাকেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক চলছে।

স্বামী নিখিল জৈনের ঢাকের তালে নাচেন নুসরাত

ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের একজন পণ্ডিত মুফতি আসাদ কাশমী বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। তিনি হিন্দু দেবতাকে পূজা দিচ্ছেন, যদিও ইসলামের অনুসারীদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও উপাসনা না করার। তিনি যা করেছেন তা হারাম। নুসরাত তার ধর্মের বাইরে বিয়ে করেছেন। তার নাম ও ধর্ম পরিবর্তন করা উচিত। যিনি মুসলিম নাম রেখে ইসলামের অমর্যাদা করেন এমন মানুষ ইসলামের প্রয়োজন নেই।’

ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেসের আসাম রাজ্যের আইটি সেলের এক কর্মী নুসরাতকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। 

তবে নুসরাতের পাশেও দাঁড়িয়েছেন অনেকে। অনেকের দাবি, সালমান খান ও শাহরুখ খান যখন পূজায় অংশ নেন তখন কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেন না কেন? ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম্প্রীতির ওপর একে হুমকি মনে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত দিচ্ছেন অনেকে।

আলী শেখ নামের একজন টুইটারে লেখেন, একসময় আমি গণেশ পূজার প্যান্ডেল বানাতে দিনে আট ঘণ্টারও বেশি সময় দিতাম। আরতিতে অংশ নিতাম ও প্রসাদও খেতাম। সবাই একসঙ্গে আনন্দ করতাম। কেউ কখনো বিরক্ত বা আপত্তি করেনি। আমি নুসরাত জাহানের পক্ষে আছি।

তবে এসবে একেবারেই উদাসীন নুসরাত। তার বক্তব্য, জন্মসূত্রে তিনি মুসলমান এবং তার স্বামী হিন্দু হওয়ায় উভয় ধর্মের প্রতিই তিনি শ্রদ্ধাশীল। আর ধর্মবিশ্বাস নিতান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।

অঞ্জলি শেষে স্বামীর সঙ্গে ঢাক বাজান অভিনেত্রী নুসরাত

রোববার (৬ অক্টোবর) মহাঅষ্টমীতে শাড়ি ও সিঁদুর পরে নুসরাত তার স্বামীর সঙ্গে কলকাতার সুরুচি সংঘের পূজা মণ্ডপে গিয়ে পূজা দেন। তিনি চোখ বন্ধ রেখে হাতজোড় করে অঞ্জলির মন্ত্রপাঠ ও প্রার্থনা করেন। এরপর তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাক বাজান এবং নাচেনও। সামাজিক ও গণমাধ্যমগুলোতে তার এই ভিডিও ও ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের একটি পূজা আয়োজনে অসাম্প্রদায়িকতার থিম নিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। মণ্ডপে বেজেছে আজানের সুর, সঙ্গে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের প্রার্থনাও ছিল। দেবীকে নিরস্ত্র অহিংসরূপে সাজানো হয়েছে মণ্ডপটিতে। আয়োজকদের শ্লোগান ‘আমরা এক, একা নই।’

সকল ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে সাজানো হয়েছে একটি মণ্ডপ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই আয়োজনের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। কিন্তু এতে খুশি হয়নি কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। এই পূজার আয়োজকদের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা ঠুকে দিয়েছে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নতুন কিছু নয়। দুর্গাপূজা ঘিরে এই বিপরীতধর্মী দুটি ঘটনা সেখানে এ মুহূর্তের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু। সেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার প্রশ্নে সকল মত-পথের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কোনদিকে যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।